যশোর: মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে প্রায় সোয়া কোটি টাকা মূল্যের ১৩০ মেট্রিক টন চাল পাচারের অভিযোগ উঠেছে সেখানকার কর্মকর্তা শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। এসব চাল পাচারের পর বিক্রি করে ফেলতেন তিনি।
শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) তাকে গ্রেফতারের পর ৫৪ ধারায় আদালতে তোলা হয়। শালিখা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালমা চৌধুরী বাদী হয়ে শফিকুরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এ ঘটনা তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
জানা গেছে, গত নভেম্বরের শেষ দিকে আড়পাড়া সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে সরকারি চাল পাচারের শঙ্কা দেখা দেয় খাদ্য বিভাগে। এর পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা আব্দুস সালামের নির্দেশে মাগুরা জেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোতোষ কুমার মজুমদার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত চলাকালে প্রাথমিকভাবে কমপক্ষে ১৩০ মেট্রিক টন চাল পাচারের বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি।
পরে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই গুদাম সিলগালা করেন। এছাড়া খাদ্য বিভাগের নির্দেশে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালমা চৌধুরী বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ করেন। পুরো ঘটনা তদন্তে মাগুরা জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, কুষ্টিয়ার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের একজন রসায়নবিদকে সদস্য করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
খাদ্য বিভাগ থেকে জানা যায়, শালিখা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শফিকুর রহমান দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি চাল পাচার করে খোলা বাজারের সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করেন। এ ঘটনা তদারকিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালমা চৌধুরী যোগসাজশ করে বিষয়গুলো ধামাচাপা দিয়ে গোপন রেখেছেন।
গুদাম সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি ১৫ দিন পর পর গুদাম পরিদর্শন করার নিয়ম থাকলেও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গুদাম পরিদর্শন না করেই স্টক রেজিস্ট্রারে সই করে দেন। এমনকি, গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত খাদ্যের মজুদ ঠিক আছে মর্মেও সই করেন।
বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এলে সন্দেহ বাড়ে। পরে গুদাম কর্মকর্তা শফিকুর রহমানকে প্রত্যাহার করে তদন্ত কমিটি গঠন করলে সালমা চৌধুরী নিজেও বিপাকে পড়েন। এরপর কর্মকর্তাদের নির্দেশে তিনি মামলা করতে বাধ্য হন। তিনি মামলার বাদী হলেও তাকে ঘিরেই এ ঘটনা, ফলে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আলোচনায় থাকছে ঘটনাটি।
এ বিষয়ে মাগুরা জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোতোষ কুমার মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, গুদাম সিলগালা করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় কে জড়িত সেটা তদন্ত কমিটি এবং তদন্তকারী সংস্থা খুঁজে বের করবেন। যারাই জড়িত থাকুক নিশ্চয়ই আইনের আওয়তায় আসবেন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবেন।
মাগুরা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, এটা ৪০৯ ধারার অভিযোগ। ফলে সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরাসরি আমরা তদন্ত করতে পারি না। এ বিষয়ে দুদক কাজ করছে, উনারা ভালো বলতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২২
ইউজি/এমজে