ঢাকা: আর দুই ঘণ্টা পরে শুরু হতে যাচ্ছে ইংরেজি নতুন বছর ২০২৩। নতুন বছর বরণ উপলক্ষ্যে থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি ও পটকাবাজি ও ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
তবুও পুরনোকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ফুটানো হচ্ছে আতশবাজি ও পটকা, আকাশে ওড়ানো হচ্ছে ফানুস।
শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরো, শেরেবাংলা নগর, আগারগাঁও, মিরপুর, রামপুরা, বাড্ডা, পুরান ঢাকার চকবাজার, তাঁতী বাজার, রায়সারাজার, চানখারপুল এলাকায়সহ বিভিন্ন এলাকায় থার্টি-ফার্স্ট নাইটের আনন্দ উল্লাসের অংশ হিসেবে আতশবাজি ও পটকা ফোটাতে দেখা গেছে।
শনিবার রাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় ফানুস ওড়াতে দেখা যায়। ছোট ছোট কিশোররা ফানুস উড়িয়ে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে দেখা গেছে৷
এদিকে মোহাম্মদপুর এলাকার অলি-গলিতে কিছুক্ষণ পরপর থেমে থেমে ফুটছে আতশবাজি ও পটকা। পাড়া মহল্লায় ছোট ছোট শিশুদেরও আতশবাজি ফোটাতে দেখা গেছে।
যদিও শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক থার্টি ফার্স্টের নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, থার্টিফার্স্টে উন্মুক্ত স্থানে কোনো আয়োজন করা যাবে না। কোথাও কোনো ডিজে পার্টি হবে না। কোথাও আতশবাজি-পটকা ফুটানো যাবে না, ফানুস ওড়ানো যাবে না। আপনারা জানেন ঢাকা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলকা। তাই জোর অনুরোধ করছি যাতে কেউ ফানুস না উড়ায়। ফানুস উড়ালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ওই এলাকায় বিকাল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে ফানুস ও আতশবাজি বিক্রি করা হয়েছে। একটি ফানুস ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। মোহাম্মদপুর এলাকায় বিক্রি হয়েছে ফানুস ও আতশবাজি।
পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকার এক দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ফানুস ও আতশবাজি ভালোই বিক্রি হয়েছে৷ আমি কিছু অতশবাজি এনেছিলাম যা বিকেলের মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। ফানুস ৩০টি এনেছিলাম তাও শেষ হয়ে গেছে। নিষেধাজ্ঞা থাকে তাও ছেলে পেলে গোপনে এসে নিয়ে যায়।
এদিকে মোহাম্মদ এলাকায় ফানুস উড়ানোর সময় কথা হয় ফজলুর সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, ফানুস ওড়ানোর না হলে আতশবাজি ফোটানো না হলে থার্টি ফার্স্ট বলে মনে হয় না। তাই একটু আনন্দ উল্লাস করছি।
এদিকে শ্যামলি এলাকার বাসিন্দা আরমান বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তায় ছোট ছোট ছেলেরা পটকা ছুড়ে ছুড়ে মারছে। তারা আতশবাজি ও পটকা ফুটিয়ে আনন্দ করছে। এমন ভাবে রাস্তায় ছুঁড়ে মারছে দেখলেই এখন ভয় লাগে।
এদিকে গত বছর থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে অনেকেই ফানুস উড়িয়ে আনন্দ করে। এতে সারাদেশে অন্তত ২০০টি স্পটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে শুধু রাজধানীতেই ১০টি স্পটে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে নতুন বছরের আনন্দ সবার মধ্যে ছিল, শুধু ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী পরিবার গুলোর মধ্যে ছিল না।
যদিও গত বছরই দুর্ঘটনার আশঙ্কা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে রাজধানীতে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফোঁটানোতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলো ঢাকা মেট্রোপলটন পুলিশ (ডিএমপি)। এই নির্দেশনা না মানার কারণেই গতবছর অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনা ঘটেছিলো।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর থার্টি ফাস্ট নাইটের প্রথম ২০ মিনিটের মধ্যে সারাদেশ থেকে প্রায় ২০০টি অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়। এরমধ্যে তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল, ধানমন্ডি, রায়েরবাগসহ রাজধানীরতেই ১০টি আগুনের ঘটনা ঘটে। শুধু রাজধানীর এই স্পটহগুলোর আগুন নিয়ন্ত্রণে ওই রাতে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট কাজ করেছে। ফায়ার সার্ভিসের তদন্তে জানা যায়, এসব আগুনের কারণ ফানুস ওড়ানো। এসব আগুনে হতাহতের ঘটনা না থাকলে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি রয়েছে।
তবে এবছর ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফোটানোর বিষয়ে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। এরপরও যদি এর ব্যত্যয় ঘটে এবং নগরবাসীর নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটে, তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে এবছর বাড়ির ছাদেও কোনো অনুষ্ঠান করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
তবুও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফোটানো বেড়েই চলেছে। বিরতি নেই ফুটছে আতশবাজি। আকাশে ওড়ছে ফানুস।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২
এসজেএ/এসএ