রংপুর: কনকনে শীত আর ঠাণ্ডা বাতাসে কাহিল হয়ে পড়েছেন রংপুরের মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা।
এছাড়া গত এক সপ্তাহে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ও বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছে তিন শতাধিকের বেশি রোগী। ভর্তি হওয়া এসব রোগীর মধ্যে সাত দিনের ব্যবধানে ১৭ শিশু ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। তাদের সবার বয়স ছিল ১ মাস থেকে চার বছরের মধ্যে। আর শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ দুই নারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
বুধবার (০৪ জানুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে রমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডে প্রতিটি শয্যায় একাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। শয্যা না পেয়ে অনেক শিশুকে মেঝেতে বিছানা করে রাখা হয়েছে। কোনো শয্যায় দুইজন, কোথাও তিনজন। অনেকে সন্তানের চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন।
হাসপাতালের শিশু বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত এক সপ্তাহে ১৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরের মিঠাপুকুরের ১০ মাসের শিশু ওমর আলী, লালমনিরহাট পাটগ্রামের ৩ বছরের শিশু, গাইবান্ধার নবজাতক, কুড়িগ্রাম চিলমারির আড়াই বছরের শিশু, রংপুর নগরীর শালবন এলাকার ১৯ মাসের মাহমুদুল হাসান রয়েছে।
শুধু শীতজনিত রোগ নয়, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, অপরিপক্ক ও কম ওজনের নবজাতক এবং জন্মের সময় মস্তিষ্কে আঘাতজনিত কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
পৌষের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রংপুর অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে রংপুর সিভিল সার্জন ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দিন দিন তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শিশু ও বয়স্করা কাবু হচ্ছেন। তবে চলতি সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে সেটির পরিমান আরও বেশি ছিল। এখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স শিখিলী খাতুন জানান, চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০টি শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। এবার কোল্ড ডায়রিয়ায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. তানভীর চৌধুরী জানান, রোগীর সংখ্যা বাড়লেও গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে কম। আগের সপ্তাহে ৪ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছে।
রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. শামীম আহমেদ বলেন, শীতের সময় নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। তবে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২৩
এফআর