ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

আতঙ্কে রেংয়েন পাড়ার বাসিন্দারা, মানবাধিকার প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৩
আতঙ্কে রেংয়েন পাড়ার বাসিন্দারা, মানবাধিকার প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন ছবি: বাংলানিউজ

বান্দরবান: বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের রেংয়েন পাড়ায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ম্রো সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো এলাকায়।

এ ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চার সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধি দল।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সকালে কমিশনের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সদস্য কংজরী চৌধুরীর নেতৃত্বে ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন এ প্রতিনিধি দল।

পাড়াবাসীদের ওপর ক্রমাগত হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

রেংয়েন পাড়ার বাসিন্দা রেং চং ম্রো বলেন, আমাদের চলাফেরা করতে এখন প্রচুর ভয় লাগে। কয়েকবার হামলা, জুমে আগুন ও পানিতে বিষ ঢেলে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি আমাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছে। তাদের আচরণে আমরা আতঙ্কিত।

রেংয়েন পাড়ার ব্যবসায়ী রেংয়াং ম্রো বলেন, আমাদের বসবাস করা এখন খুবই কষ্টকর হয়ে গিয়েছে। সব দিকেই লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি আমাদের গিলে খাচ্ছে।

এদিকে, মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দলটি দীর্ঘ দুই ঘণ্টাব্যাপী রেংয়েন পাড়া পরিদর্শন করেছেন। পাড়াবাসীর সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিবরণ শুনেছেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

প্রতিনিধি দলের দলনেতা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সদস্য কংজরী চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি, যা যা দেখলাম আর শুনলাম তা আমরা সরকারকে জানাবো।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় আপনাদের (সাংবাদিকদের) সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। সবাই মিলে কাজ করলে আশাকরি এ সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে।

এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রতিনিধি দলের সদস্য পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) এবং জেলা ও দায়রা জজ মো. আশরাফুল আলম বলেন, আমরা এখানে তদন্ত করলাম। দেখলাম তিনটি ঘর পোড়ানো হয়েছে এবং একটি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক।

তিনি আরও বলেন, গত বছরের এপ্রিল থেকে এখানে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি-র সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভূমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। সেই কারণে আমরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রথম থেকে এ বিষয়ে সোচ্চার ছিলাম আর আমরা একাধিক সুপারিশ করেছিলাম।

আমরা আশঙ্কা করেছিলাম ভূমি বিরোধকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, সে মর্মে আমরা কিছু নির্দেশনাও দিয়েছিলাম। সেই নির্দেশনা সঠিকভাবে পালিত হলে হয়তো আজকের এ ঘটনা আমাদের দেখতে হতো না।

স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি জানিয়ে আশরাফুল আলম বলেন, তারা আমাদের জানিয়েছে এ ধরণের ঘটনা আগামীতে আর হবে না। আমরা যা দেখলাম তা কমিশনে প্রতিবেদন দেব। সে অনুযায়ী কমিশন পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

জানা যায়, ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের রেংয়েন পাড়া, লাংকম পাড়া ও জয় চন্দ্র পাড়ার ৩৫০ একর জুম চাষের বনাঞ্চল পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয়দের সঙ্গে রাবার ইন্ডাস্ট্রির ভূমি বিরোধ চলছিল। তার সূত্র ধরে সম্প্রতি ২ জানুয়ারি আবারও ম্রো পাড়ার বাড়িঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করছেন ওই এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবারগুলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২৩
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।