ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মেহেরপুরে জেঁকে বসেছে শীত, বিপাকে ছিন্নমূল-দিন মজুররা

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৩
মেহেরপুরে জেঁকে বসেছে শীত, বিপাকে ছিন্নমূল-দিন মজুররা

মেহেরপুর: মেহেরপুরে গত কয়েকদিন যাবৎ হাড় কাঁপানো শীতের সঙ্গে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। হাড় কাঁপানো শীতে শুধু জনজীবন নয়, জবুথবু হয়ে পড়েছে প্রাণীকুলও।

কনকনে ঠাণ্ডায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।

হিমেল হাওয়া আর হাড় কাঁপানো শীতে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না মানুষ। ছিন্নমূল মানুষের মাঝে নেমে এসেছে হাহাকার। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন তারা।

ইতোমধ্যে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন গাংনী উপজেলার চেংগাড়া গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকার বদরুদ্দীনের স্ত্রী জাহানারা খাতুন। এদিকে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন সংগঠন শীত বস্ত্র বিতরণ করলেও ছিন্নমূল মানুষের কাছে এই শীতবস্ত্র পর্যাপ্ত নয়।

এদিকে শৈত্য প্রবাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস।

ভারতীয় সীমান্তবর্তী মেহেরপুর জেলায় জেঁকেবসা শীতের পাশাপাশি কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা মেলেনি দুইদিন যাবৎ। ঘন কুয়াশার কারণে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। দূরপাল্লার বাস ট্রাকসহ ছোট ছোট যানবাহনগুলো হেডলাইট জালিয়ে চলতে দেখা যাচ্ছে। দিনের তাপমাত্রা কিছুটা সহনীয় হলেও রাতে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে কুয়াশার পরিমাণ কম থাকার পাশাপাশি বেলা ১১টার দিকে মুখ দেখা গেছে। তবে হাড় কাঁপানো শীতে বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষ। কনকনে শীতের কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকেই। তবুও পেটের তাগিদে কাউকে রিকশা, ভ্যান বা ক্ষেত খামারে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে।

চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় মেহেরপুরের তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ। আগামী কয়েকদিন মেহেরপুরসহ আশেপাশে জেলায় শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। এ সময় সকালে ঘন কুয়াশা থাকলেও বেলা ১১ টার দিকে সূর্যের দেখা মিলবে।

মেহেরপুর জেলা শহরের অটোচালক সমসের আলী বলেন, প্রচণ্ড শীতে লোকজন বাইরে বের হচ্ছেন না। যে কারণে আমাদের ভাড়াও হচ্ছে না। সারাদিন গাড়ি চালিয়ে ২/৩শ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। এদিকে অটো চালাতে গিয়ে হাত—পা ঠাণ্ডায় শক্ত হয়ে যাচ্ছে।

সদর উপজেলার কালিগাংনী গ্রামের দিন মজুর নাজিরা বেওয়া বলেন, আমরা রাস্তার মাটি কাটার কাজ করি। আমার দলে প্রায় ১৫ জন নারী শ্রমিক আছেন। কাকডাকা ভোর বেলায় আমরা কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে বের হয়ে শহরে আসি। বিভিন্ন এলাকার গেরস্থরা গাংনী উপজেলা শহর থেকে আমাদের দৈনিক চুক্তিতে নিয়ে যান। প্রচণ্ড শীতের কারণে গেরস্থরা আসছেন না। ফলে মাঝে মাঝে কাজ না পেয়ে শূন্য হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে।

গাংনী উপজেলার বাওট গ্রামের আশরাফুল ইসলাম বলেন শীতের কারণে, দুই-তিন দিন যাবৎ ক্ষেত খামারে কাজ করতে যেতে পারছি না। ছেলে মেয়ে নিয়ে বিপদে আছি। কাজে করতে না পেরে পরিবার নিয়ে অর্ধাহারে ঘরে বসেই কাটাতে হচ্ছে।

শীতের প্রভাবে মেহেরপুর জেলা ও গাংনী উপজেলা শহরে মানুষের উপস্থিতি রয়েছে কম। জরুরি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া মানুষ ঘরের থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না।

এদিকে গত কয়েক দিনের জেঁকে বসা শীত ও শৈত্য প্রবাহের কারণে জ্বর—কাশিতে বৃদ্ধ থেকে শিশুরা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের দারস্থ হচ্ছেন।

গাংনী শহরের  নিক্সন মার্কেটের কাপড়ের দোকানি রবিউল ইসলাম, আয়ূব আলী বলেন, শীতের কারণে দুপুরের দিকে দোকান খুলছি। বাজারে লোকজন খুব একটা আসছেন না। কোনো খরিদ্দার নেই, তাই বেচাকেনাও ভাল হচ্ছে না। এদিন তীব্র শীতের কারণে কেউ দোকানের দিকে আসেনি।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে যেসব শীত বস্ত্র এসেছে সেগুলো উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আরও শীত বস্ত্র চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

শুধু সরকারিভাবেই নয়, সমাজের বিত্তবানদের প্রতিও ছিন্নমূল অসহায় শীতার্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।