ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

হত্যার একযুগ পূর্তি

ফেলানীর নামে রাজধানীতে সড়ক চান জাফরুল্লাহ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৩
ফেলানীর নামে রাজধানীতে সড়ক চান জাফরুল্লাহ 

ঢাকা: ভারত সীমান্তে দেশটির সীমান্ত রাক্ষী বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানীকে হত্যার একযুগ পূর্ণ হয়েছে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের সামনের রাস্তাটি ফেলানী নামকরণের জন্য ঢাকা উত্তরের সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

তিনি বলেন, ভারতের সীমান্ত হত্যা প্রতিহত করতে আমি মনে করি উত্তরের মেয়র সাহেবের উচিত হবে ভারতীয় হাইকমিশনের সামনের রাস্তাটির নাম ফেলানী রোড করে দেওয়া। তাহলে তাদের প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দেওয়া হবে‘ তোমরা অন্যায় কাজ করছো, এই অন্যায়ের প্রতিকার চাই আমরা’।

শনিবার (৭ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে ফেলানী হত্যা দিবস উপলক্ষে ‘সীমান্তে বিএসএফের গুলি থামবে কবে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি এই সভার আয়োজন করে।

লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ভারতে পাঠানোর সুপারিশ করে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যতদিন না ভারতের কুকর্ম বন্ধ হয়, তাদের সব ধরনের ট্রানজিট বন্ধ করে দেওয়া হোক। একই সঙ্গে আরও উচিত হবে আমাদের দেশে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে এর মধ্যে যারা ভারতে যেতে চায় তাদের যেতে দিতে সাহায্য সহযোগিতা করা, তাদের ধরে না আনা। কারণ ভারতের সীমান্ত রক্ষা আমাদের দ্বায়িত্ব না। ভারতই এই রোহিঙ্গা সমস্যার সৃষ্টি করেছে। ভারতের এই চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে।

পাশাপাশি সরকার নির্বাচন নিয়ে একটা ভয়ানক পরিকল্পনা করছে উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, একটা নিয়ম আছে সরকারি বেতন-ভাতা নিয়ে কেউ অবসরের তিন বছরের মধ্যে রাজনীতিতে আসতে পারবেন না। কিন্তু এইচটি ইমাম সাহেব মারা গেছেন তার জায়গায় এমন একজনকে নিয়োগ দিচ্ছেন যিনি কয়েক দিন আগেও কেবিনেট সেক্রেটারি ছিলেন। যিনি চাইলেই যে কোনো সেক্রেটারি এবং ওসি সাহেবদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পারেন। সুতরাং এটাই প্রমাণ করে সরকার নির্বাচন নিয়ে একটা ভয়ানক পরিকল্পনা করছে। এবার আর দিনের ভোট রাতে হবে না। ভোর বেলায় ৬০-৭০ ভাগ ভোট হবে ওসি সাহেব ও আমলাদের দিয়ে। বাকি ৩০ ভাগ হবে সকাল নয়টার পর। এইটা কী আমরা মেনে নিতে পারি? এর বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।

আগামী নির্বাচনে সরকারকে প্রতিহত করতে বিরোধী দলগুলোকে লক্ষাধিক ভলেন্টিয়ার নিয়োগের পরামর্শ দিয়ে গণস্বাস্থের এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, বিরোধীদলগুলো বলছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। এটা বললেই তো হল না, এটাকে প্রতিহত করতে হবে। কিন্তু সরকার তো নির্বাচন করে যাবে। তাহলে এজন্য আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। লক্ষাধিক ভলেন্টিয়ার নিয়োগ দিয়ে এদেরকে ট্রেনিং দিতে হবে। যাতে করে তারা সারারাত ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে পারে। যাতে করে তারা কোনো ধরনের চক্রান্ত কার্যকর না করতে পারে।

আলোচনা সভায় বিশেষ বক্তার বক্তব্যে সরকারের সমালোচনা করা জাতীয় পার্টির ঐতিহাসিক দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন দলটির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান হায়দার।    

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সরকারের সমালোচনা করতে হবে। আর সত্যিকারের বিরোধী দল হিসেবে এটা আমার ঐতিহাসিক দায়িত্ব। মোট কথা আমার ওউপর এটা ফরজ। এই ফরজ থেকে বের হবার কোনো উপায় নাই।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।

ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে ফেলানীর মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করছে বিএসএফ।  ছবি: সংগৃহীত

উল্লেখ্য. ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ গুলি করেতে নির্মমভাবে হত্য করে কিশোরী ফেলানীকে (১৪)। এরপর তার মরদেহ সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলেছিল সাড়ে ৪ ঘণ্টা। প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল গণমাধ্যমসহ বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী আলোড়ন শুরু হলে ৩০ ঘণ্টা পর বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির কাছে ফেলানীর মরদেহ হস্তান্তর করে বিএসএফ।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ রামখানা কলোনীটারী গ্রামের নুর ইসলাম ও জাহানারা বেগমের বড় মেয়ে ফেলানী খাতুন।

ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম শনিবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, মেয়েকে গুলি করে হত্যা ও তার মরদেহ কাঁটাতারে ঝুলে রাখার দৃশ্য আজো আমার চোখে ভাসে। সেই নির্মম অসহনীয় দৃশ্য ভুলতে পারি না। আমার চোখের সামনেই ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমি বেঁচেছিলাম কিন্তু মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি। ৩ হাজার টাকা চুক্তিতে দালালে মাধ্যমে ফেলানীকে নিয়ে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আসছিলাম। বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ ফেলানীকে গুলি করেন।

নুর ইসলাম জানান, কাজের সন্ধানে তিনি পরিবার নিয়ে ভারতের আসামে থাকতেন। সেখানে চায়ের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ফেলানীকে নিয়ে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছিলেন। দেশে এনে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

 তিনি বলেন, দুইবার ভারতে যেয়ে সেখানকার আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি। আশা করেছিলাম, শিগগিরই ফেলানী হত্যার ন্যায়বিচার পাব। আজো তা পাইনি। 'যতদিন পর্যন্ত ফেলানী হত্যার ন্যায়বিচার না পাই ততদিন বিচারের দাবি জানাতেই থাকব।

বাংরাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৩
ইএসএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।