ঢাকা: বছরের শুরুতে টানা শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। এ পরিস্থিতিতে কৃষকরাও পড়েছেন বিড়ম্বনায়।
জানা গেছে, ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে মৌসুমের সবজি ও ইরি-বোরো বীজতলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শাকসবজি ও আলুর ক্ষেতের মড়ক ধরার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে আলুর ক্ষেত নিয়ে কৃষকরা বেশি চিন্তিত। ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীত বীজতলায় প্রভাব ফেলতে পারে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে এমন পরিস্থিতির কারণে কৃষকরা মাঠে কাজ করতে পারছেন না। তৈরি থাকা জমিতে চারাও রোপণ করা যাচ্ছে না। দেখা দিয়েছে কৃষি শ্রমিক সংকট। সব মিলিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
এমন আবহাওয়া বেশি দিন থাকলে কোল্ড ইনজুরিজনিত কারণে মড়ক দেখা দিতে পারে। প্রকৃতিগত সমস্যা হওয়ায় কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো ফল পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান হবে। তারপরও ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে ফসলের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি জেলায় মাঠ কর্মকর্তারা কৃষকদের সহযোগিতা করছেন। পাতা ঝরে যাওয়া রোধ, সবজি ও ফসলের পোকা আক্রমণ ঠেকাতে কৃষককে নানা রকমের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শীত-কুয়াশায় বীজতলায় যাতে পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
আরও ৪-৫ দিন মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে ফসল রক্ষায় চার ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, কুয়াশা ও তীব্র শীতের এ অবস্থায় ফসলের বীজতলায় ৩-৫ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে। স্বচ্ছ পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বীজতলা দিনরাত ঢেকে রাখতে হবে, তবে খেয়াল করতে হবে চারার পাতা যাতে পলিথিন স্পর্শ না করে। পাশাপাশি ঢেকে রাখা বীজতলায় পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দিতে হবে, সঙ্গে চারার ওপর জমে থাকা শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে। আর প্রতি দশ লিটার পানিতে ৭০-৮০ গ্রাম থিওভিট অথবা কমুলাস ভালোভাবে মিশিয়ে ৪-৫ শতাংশ বীজতলায় স্প্রে করতে হবে।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের কৃষক মফিজুর রহমান বলেন, তীব্র শীতের শাকসবজি ও ফসলে পোকার আক্রমণ বেড়েছে। এছাড়া পাতা হলদে হয়ে যাচ্ছে। শীতে বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় বোরো রোপণে বিলম্ব হচ্ছে। এতে আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। তাছাড়া বোরো চাষ করার সাহস পাচ্ছি না। যে পরিমাণ শীত পড়ছে, এতে একটু দেরিতে বীজতলা তৈরি করতে হবে। তবে সময়মতো বোরো চাষ না করলে ধানের ক্ষতি হতে পারে। এখন আমরা দোটানার মধ্যে পড়েছি।
কৃষি অর্থনীতিবিদ প্রফেসর গোলাম হাফিজ বাংলানিউজকে বলেন, শীতে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ হয়ে থাকে। তার মধ্যে বোরো ধানের চাষ অন্যতম। অতিরিক্ত শীতের কারণে ধান চাষে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে। বিশেষ করে বীজতলা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাই সৃষ্টি হয় শীতের কারণে। এ জন্য অতিরিক্ত যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের কারণে জীবনযাত্রা কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে। জমি চাষ কাজে কৃষকরা সমস্যায় পড়লেও এখন পর্যন্ত বীজতলার ক্ষতি হয়নি। তবে দ্রুত আবহাওয়ার পরিবর্তন না হলে বোরো চাষ কিছুটা বিঘ্নিত হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২২
টিএ/এমজে