ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের স্থপতির স্বদেশে ফেরার দিন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৩
১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের স্থপতির স্বদেশে ফেরার দিন

ঢাকা: ১০ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে এদিন বঙ্গবন্ধু স্বদেশ ভূমিতে ফিরে আসেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি বিজয় অর্জনের পর বন্দি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। সেখান থেকে লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান।

স্বদেশে ফিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উত্তাল জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এতো ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এতো ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এতো ভালোবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কি না। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। ’

পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে বার বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় এবং আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হলেও বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে কালক্ষেপন করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা এবং বিশ্ব জনমতের চাপের কাছে পাকিস্তান বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি সকালে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর একটি পাকিস্তানি সামরিক বিমানে করে গোপনে তাকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফেরার পথেই বঙ্গবন্ধু বিশ্ব নেতাদের কাছ থেকে ব্যাপক সম্মান পান।

লন্ডনে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গবন্ধুকে অভূতপূর্ব সম্মান দেখায়। বঙ্গবন্ধুর বহনকারী প্লেনটি হিথরো বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর বঙ্গবন্ধু ভিআইপি লাউঞ্জে গেলে তাকে ব্রিটিশ বৈদেশিক দপ্তরের কর্মকর্তারা তাকে স্বাগত জানান। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে ব্রিটিশ ফরেন অফিসের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা স্যার ইয়ার মাদারল্যান্ড উপস্থিত হয়ে জানান ব্রিটিশ সরকার বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদা দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে ব্রিটিশ সরকারের সম্মানিত অতিথি হিসেবে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হোটেল ক্যারিজেসে নিয়ে যাওয়া হয়। অল্প সময়ের মধ্যে ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা (পরে প্রধানমন্ত্রী) হ্যারল্ড উইলসন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যান হোটেলে। বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডনে পৌঁছান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ ছিলেন লন্ডনের বাইরে। বঙ্গবন্ধুর পৌঁছানোর কথা শুনে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী হিথ ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ছুটে আসেন। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে বঙ্গবন্ধুকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ। সৌজন্যে সাক্ষাৎ শেষে বিদায়ের মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ, সব প্রথাগত প্রটোকল ভেঙে নিজ হাতে গাড়ির দরজা খুলে বঙ্গবন্ধুকে গাড়িতে তুলে দিয়ে নজিরবিহীন সম্মান দেখান।

এর পর লন্ডন থেকে বঙ্গবন্ধু আসেন দিল্লিতে। সেখানে পালাম বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু নামার পর তাকে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিবি গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধী স্বাগত জানান। দিল্লি  থেকে বঙ্গবন্ধু ঢাকায় আসেন।

এদিকে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জয়লাভ করলেও যার নেতৃত্বে যুদ্ধ হয় সেই নেতার জন্য জাতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। ওই দিন বঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্য ঢাকায় জনতার ঢল নামে। বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানাতে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে শুরু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) ছিল জনসমুদ্র। বিমান থেকে নেমে মাটিতে পা দিয়েই আবেগে কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি। আবেগাপ্লুত ও কান্নাজড়িত কণ্ঠেই তিনি রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার সামনে ভাষণ দেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৩
এসকে/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।