ঢাকা: গলা কাটা বা জবাই, দেশের যেকোনো অঞ্চলে এ দুটি শব্দ বেশ ভয়ঙ্কর। নিজ নিজ উদ্দেশ্য হাসিলে এ কায়দায় কার্যসিদ্ধি করে থাকে ছিনতাইকারী থেকে শুরু করে সিরিয়াল কিলাররা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম এ চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, দক্ষিণখান এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের টার্গেট করতো তারা। কোনো একটি গন্তব্যের কথা বলে বাহনটি ভাড়া করে নিয়ে তারা যেত নিজেদের পূর্বপরিকল্পিত স্থানে। যেখানে চালকের গলা কেটে হত্যা করে অটোরিকশাটি নিয়ে যেত তারা। মরদেহ ফেলে দিতো কোনো নির্জন স্থানে।
এ ঘটনাগুলোর অনেকগুলোই থাকতো ক্লু-লেস। যে কারণে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো থাকতো বিড়ম্বনায়। অনেক সময় কোন জায়গা থেকে তদন্ত শুরু করা হবে, তা নিয়েও দেখা দিত সংশয়।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে শনিবার (১৪ জানুয়ারি) পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানা ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় সদস্যরা। এ অভিযান থেকে দক্ষিণখান থানা এলাকায় ক্লু-লেস হত্যা মামলার ঘটনায় জড়িত, অটোরিকশা ছিনতাই, হত্যা ও গুম চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. খালেদ খান শুভ (২০), মো. টিপু (৩১), মো. হাসানুল ইসলাম ওরফে হাসান (২০), মো. জাহাঙ্গীর হোসেন (৪০), আব্দুল মজিদ (২৯) ও মো. সুমন (৩৫)। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় একটি মোবাইল ফোন, দুটি সুইস গিয়ার চাকু, অটোরিকশা ও পাথর।
গ্রেফতারের বিষয়টি শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুণ অর রশীদ। এ সময় কোন ঘটনা থেকে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটি উল্লেখ করেন তিনি।
হারুণ অর রশীদ বলেন, ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর রাতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক মো. মোস্তফা বাসা থেকে বের হন। তারপর থেকে কোনো সন্ধান পাওয়া না গেলে তার মা শামছুন্নাহার দক্ষিণখান থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন। ১৭ ডিসেম্বর তিনি জানতে পারেন, দক্ষিণখান থানাধীন আসিয়ান সিটির ২৩ নম্বর রোডের পশ্চিমে একটি ফাঁকা প্লটে কারও মরদেহ পড়ে আছে। শামছুন্নাহার তার স্বামীসহ ওই প্লটে যান। মরদেহটি দেখে সেটি তার ছেলের বলে শনাক্ত করেন। পরে বাদী হয়ে তিনি একই থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার দায়িত্ব পায় ডিবি পুলিশ। তদন্তের সময় তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। পরে গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম মৌলভীবাজারের রাজনগর থানা এলাকা থেকে মো. খালেদ খান শুভকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মোস্তফার মোবাইল ফোনটি।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, গ্রেফতারের পার শুভকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণখান থানা এলাকা থেকে মোস্তফার হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত মো. টিপু ও মো. হাসানুল ইসলাম ওরফে হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও আব্দুল মজিদদের। পরে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোস্তফার অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় অপর একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গুম, ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি সুইস গিয়ার চাকু জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর করা আরও একটি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে জানান ডিবি প্রধান। তিনি জানান, এদিন সন্ধ্যার পর মো. টিপু, মো. হাসানুল ইসলাম ওরফে হাসান ও মো. শুভ যাত্রী সেজে অপর একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালককে গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানাধীন পূর্বাচলের ২৫ নম্বর সেক্টরের নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। এরপর শুভর কেনা ধারালো ছুরি দিয়ে তাকে হত্যা করে চক্রের সদস্যরা। পরে মরদেহ সড়কের পাশে একটি ড্রেনে ফেলে নিয়ে অটোরিকশাটি নিয়ে চিলে যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুণ অর রশীদ বলেন, এ ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। ঢাকা মহানগরীয় থানা ও ঢাকার আশপাশের জেলার বিভিন্ন থানায় হত্যা, গুম ও ছিনতাই ঘটনায় আরও মামলা রয়েছে। এ দুটি মামলা ছাড়া ধৃত আসামিরা এ ধরনের আরও কোনো ঘটনায় জড়িত কিনা খতিয়ে দেখছে ডিবি। এখন পর্যন্ত যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দক্ষিণখান থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২২
এমএমআই/এমজে