ঢাকা: শিশু, কিশোর ও যুবকদের সৎ, চরিত্রবান, আদর্শবান ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এশিয়া প্যাসিফিক স্কাউট জাম্বুরি। আগামী ১৯ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত গাজীপুরের জাতীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মৌচাকে নয় দিনব্যাপী এই স্কাউট জাম্বুরি অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতি চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হওয়া এশিয়া প্যাসিফিক স্কাউট জাম্বুরির এটি ৩২তম আসর। এছাড়া জাতীয় স্কাউট জাম্বুরির এটি ১১তম আসর। এবারের স্কাউট জাম্বুরির প্রতিপাদ্য 'সাবাস, অ্য ফাউন্টেইন অব এনার্জি'।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ স্কাউটের কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ স্কাউটের জাতীয় উপ-কমিশনার সুকান্ত গুপ্ত অলক জানান, আগামী ২১ জানুয়ারি সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই জাম্বুরির উদ্বোধন করবেন। জাম্বুরিতে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, স্কাউট চায়না (তাইওয়ান), থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানী, কানাডা, বিশ্ব স্কাউট সংস্থা ও এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করবে। আট হাজার স্কাউট, এক হাজার ইউনিট লিডার ও আইএসটি মেম্বারসহ মোট ১১ হাজার জনের মিলনমেলা হবে এই স্কাউট জাম্বুরি।
তিনি আরো জানান, এই স্কাউট জাম্বুরতে দেশি-বিদেশি স্কাউট ও স্কাউটাররা নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়, বিশ্ব ভাতৃত্ববোধ এবং একে অপরের কাছে নিজস্ব দেশীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও কালচার তুলে ধরে দেশের পরিচয় বৃদ্ধি করবে। একইসাথে বিদেশি স্কাউটরা বাংলাদেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানসমূহ দেখার পাশাপাশি বাংলাদেশকে জানার সুযোগ পাবে।
এশিয়া প্যাসিফিক ও জাতীয় স্কাউট জাম্বুরির আয়োজন সম্পর্কে এই কর্মকর্তা জানান, জাম্বুরিতে স্কাউটদের আবাসনের জন্য ১৫০০টি তাঁবু, প্রয়োজনীয় সংখ্যক অস্থায়ী টয়লেট, গোসলখানা ও বিশুদ্ধ পানির লাইন টানানো হয়েছে। তাঁবুর বাইরে পুরো এলাকায় অস্থায়ী বৈদ্যুতিক লাইন ও প্রয়োজনীয় সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় জাম্বুরী চলাকালীন অস্থায়ী ফিল্ড হাসপাতাল দিবারাত্রি ২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে। সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকবে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস টিম এবং নিরাপত্তার জন্য আনসার ও পুলিশ সদস্যরা। এর বাহিরেও স্কাউদের বিশেষ একটি টিম অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা তদারকি করবেন।
তিনি আরো জানান, জাম্বুরী প্রোগ্রাম সাজানো হয়েছে ১১টি এলেনের মাধ্যমে। এই এলেনের মধ্যে রয়েছে অ্যারোবিকস ও শরীরচর্চা, তাঁবুকলা, অবস্ট্যাকল, ফান ফ্যাক্টরী, হাইকিং, বেটারওয়ার্ল্ড, প্রতিবেশী, এসডিজি, ক্যাম্পফায়ার, জিডিভি, ক্রস রোড অব কালচার ও ফোক ফেস্টিভাল। প্রতিদিন ভোরে প্রার্থনা ও শরীরচর্চার মাধ্যমে দিন শুরু করে নিজের আবাসস্থল স্কাউটিং নৈপুণ্যতায় সাজিয়ে প্রতিদিন এলেনের বিভিন্ন বিষয়ে অংশগ্রহণ করে অংশগ্রহণকারী স্কাউটরা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করবে।
আগামী ২৬ জানুয়ারি রাতে মহাতাঁবু জলসা ও সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই জাম্বুরির সমাপ্তি হবে।
বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় কমিশনার (জনসংযোগ ও মার্কেটিং) এম এম ফজলুল হক আরিফের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রধান কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান, জাতীয় কমিশনার (প্রোগ্রাম) মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কে এম সাইদুজ্জামান প্রমুখ।
প্রধান অতিথি ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান বলেন, স্কাউটিংয়ের মূল লক্ষ্য হলো একজন শিশু, কিশোর ও যুবদের শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ সাধন করা। এসবের মাধ্যমে স্কাউটরা স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুন্দর, সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও দ্বায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবে।
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশসমূহের অংশগ্রহণে প্রতি চারবছর অন্তর এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল জাম্বুরি অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৩-৭৪ সালে প্রথম এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল স্কাউট জাম্বুরী অনুষ্ঠিত হয় ফিলিপাইনে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল জাম্বুরী অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশে। একইসাথে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় জাম্বুরী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত ২৫তম এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল স্কাউট কনফারেন্সে বাংলাদেশ এই জাম্বুরি আয়োজনের দায়িত্ব পায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
এসসি/এমএমজেড