পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মামলা দায়ের করার পরেও রাতের আঁধারে বসতবাড়িতে পেট্রল দিয়ে অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পাঁচ পরিবারের সর্বস্ব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) গভীর রাতে পঞ্চগড় সদরের হাফিজাবাদ ইউনিয়নের পানিমাছ পুকুরি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে খবর পেয়ে বুধবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদুল হক ও পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম। পরে সরকারিভাবে পরিবারটিকে শুকনো খাদ্য সহায়তা, ত্রাণ ও ঘর নির্মাণের জন্য টিন বিতরণ করেন তারা। একই সঙ্গে ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
পরিবারটি জানায়, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৫ পরিবারের বাড়িতে মজুদ খাবার, কাপড়, গরু-ছাগল, হাস-মুরগিসহ স্বর্ণালঙ্কার, বই-সার্টিফিকেট, টাকাসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকা ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারটির অভিযোগ, চারটি মোটরসাইকেলে করে রাতের আধাঁরে স্থানীয় রফিকুল, রশিদুল, জিয়া, আসিদুল, শুভ, আমিনুল ও জয় হাতে পেট্রল নিয়ে বাড়িতে এসে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
তারা আরও বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধে গত কয়েকদিন আগে তারা মিথ্যা মামলা করেছে আমাদের নামে। এর পর থেকে বাড়িতে পুরুষরা থাকতে পারছে না। এরই মধ্যে তারা নতুন করে আমাদের সব কিছু রাতের আঁধারে আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে। আমরা কোনোমতে জীবন বাঁচাতে পারলেও ছাগল-হাঁস ও মুরগিগুলো পুড়ে মারা গেছে। আগুনে আমাদের অনেকের শরীরের বিভিন্ন স্থান পুড়ে গেছে। তারা মিথ্যা মামলা করেও ক্ষান্ত হয়নি। এবার আমাদের মারার জন্য বাড়িতে আগুন দিয়েছে। আমরা তাদের বিচার দাবি করছি।
প্রত্যক্ষদর্শী রাকিব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি ঘরের বাইরে ছিলাম, এসময় দেখি চারটি মোটরসাইকেলে করে তারা এসে হঠাৎ আগুন দিয়ে পালিয়ে গেল। বাড়িতে অন্য পুরুষ সদস্যরা না থাকায় বাড়ির নারীদের দ্রুত ঘর থেকে বের হতে বলি। এর কিছু সময় পর আগুন ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দেই। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই আমাদের পাঁচ পরিবারের ১৪টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
আমরা এ ঘটনায় শেষ হয়ে গেছি। তাদের এ কর্মকাণ্ডে ছাগল, মুরগি, হাঁসও রক্ষা পায়নি। আমরা আমাদের এ ক্ষতির জন্য তাদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
আশরাফুলের মেয়ে আলপনা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, আমি পড়াশোনা করি। অনার্স প্রথম বর্ষে পরীক্ষা দেব। তাদের দেওয়া আগুনে আমার বই, সার্টিফিকেট, কাপড়সহ সব জ্বলে ছাই হয়ে গেছে। আমাদের আর কিছুই রইলো না। সেসময় আমি ভাই-বোন ও মাকে নিয়ে কোনমতে ঘর থেকে বের হতে পেরেছি। আমরা আমাদের ক্ষতিপূরণ চেয়ে তাদের বিচার দাবি করছি।
তবে অভিযুক্তদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, খবর পেয়ে ইউএনও মহোদয়সহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তাদের সবাইকে এ ঘটনায় সান্ত্বনা দিয়ে শুকনো খাবার, ত্রাণ সহায়তা ও ঘর নির্মাণের জন্য টিন দেওয়া হয়েছে। যেকোনো সমস্যায় তাদের পাশে রয়েছি।
পঞ্চগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পরিবারটিকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় ওই পরিবারটি থানায় একটি অভিযোগ করেছে। আমরা তা ক্ষতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। আশা করি তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
আরএ