ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শহুরে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারের জন্য বিশেষ সুরক্ষার সুপারিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৩
শহুরে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারের জন্য বিশেষ সুরক্ষার সুপারিশ

ঢাকা: শহুরে নিম্ন-মধ্যম ও মধ্যম আয়ের পরিবারের জন্য বিশেষ সামাজিক সুরক্ষা স্কিম তৈরি করার সুপারিশ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

শনিবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ প্রস্তাব করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি ড. গোলাম রহমান। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইআইএসএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর।

মূল প্রবন্ধের ভূমিকায় তিনি বলেন, ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালের পর গত বছরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। শহরের এবং গ্রামীণ উভয় মূল্যস্ফীতিই বেড়েছে, যা বাংলাদেশের লাখ লাখ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারের দুর্দশা বাড়িয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ মানুষের প্রকৃত আয় এবং পারিবারিক কল্যাণ হ্রাস করে। এটি বেতনভোগী নিম্ন মধ্যম এবং মধ্যম আয়ের পরিবারের দুর্দশা বাড়িয়ে দেয়। নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী মূল্যস্ফীতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় কারণ তাদের সম্পদ অত্যন্ত সীমিত। তাদের পণ্য এবং পরিষেবার ব্যয় অনেক বাড়লে তা সংকুলান করার সুযোগ কম কারণ তাদের জীবনযাত্রার অতিরিক্ত খরচ করার জন্য খুব কমই সঞ্চয় থাকে।  

উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রায়-দরিদ্র পরিবারের একটি অংশকে দারিদ্র্যসীমার নিচে নিয়ে যায় এবং কিছু দরিদ্র পরিবারকে অতিদরিদ্রে পরিণত করে। সরকারকে উপযুক্ত নীতি এবং বাজেটারি উপকরণ তৈরি করতে সাহায্য করার জন্য নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর মূল্যস্ফীতি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা য়ায় যে, জানুয়ারি ২০২২-এর তুলনায়, সাধারণ মূল্যস্ফীতি ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়তে শুরু করে, যা আবার মে মাসে হ্রাস পায়। তারপর আবার জুন থেকে বাড়তে শুরু করে এবং জ্বালানি মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী সংশোধনের পর হঠাৎ করে আগস্টে বেড়ে যায়। পরবর্তী দুই মাস বৃদ্ধির পর ডিসেম্বরে তা কিছুটা কমে আসে। জানুয়ারির তুলনায় অক্টোবরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি ছিল। তবে ডিসেম্বরে তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর কারণ প্রধানত মৌসুমি সবজির সহজলভ্যতা, আমন ধানের বাম্পার ফলন এবং মাংস ও মাছের দাম কমে যাওয়া। বছরের শুরু থেকে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি একটি সাধারণ বৃদ্ধি দেখা গেছে, যা সে মাসগুলোতে খাদ্য মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী প্রবণতা সত্ত্বেও ডিসেম্বরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ধারার রাখতে অবদান রেখেছে। ২০২২ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে শহরাঞ্চলে সর্বোচ্চ গড় মূল্যস্ফীতি পরিলক্ষিত হয়েছে।

ঢাকা মেগাসিটিতে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ২০২২ এর প্রথম মাসের তুলনায় (১০.০৮%) বেশি ছিল। গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি তার খাদ্যবহির্ভূত অংশের তুলনায় কম ছিল (যথাক্রমে ১০.০৩% এবং ১২.৩২%), অংশের তুলনায় উভয়ই দুই অঙ্ক স্পর্শ করেছে। তবে, সাধারণ পরিবারের তুলনায় নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর গড় মূল্যস্ফীতির চাপ (৯.১৩%) কম ছিল।

বার্ষিক খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতির তুলনায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি (যথাক্রমে ১০.৪১% এবং ৭.৭৬%) কম ছিল যদিও উভয় শ্রেণীর পণ্য ও সেবা মৌলিক প্রকৃতির ছিল। ভোগের ঝুড়িতে খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবার অংশ খাদ্য পণ্যের তুলনায় কম ছিল। খাদ্যবহির্ভূত জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি বেশিরভাগই স্থায়ী প্রকৃতির ছিল অতএব, খাদ্যবহির্ভূত মল্যস্ফীতি খাদ্য মূল্যস্ফীতির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল।

ক্যাবের সুপারিশে বলা হয়, শহরাঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা স্কিম বাড়ানো উচিত। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে পর্যাপ্তভাবে কভার করার জন্য ওএমএস স্কিমকে শক্তিশালী করা উচিত। ন্যূনতম টার্গেটিং ত্রুটির লক্ষ্য সহ সারা বাংলাদেশে এক কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা বৃদ্ধি করা উচিত। দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতাও বাড়াতে হবে। এছাড়াও, অস্থায়ীভাবে আওতা বাড়ানোর মাধ্যমে খাদ্য, খাদ্য-বহির্ভূত মৌলিক পণ্য এবং দুঃস্থ জনগোষ্ঠীর কাছে নগদ হস্তান্তর কর্মসূচি বৃদ্ধি করা উচিত।

যেহেতু গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর তুলনায় শহুরে জনগোষ্ঠী মূল্যস্ফীতির কারণে বেশি চাপ এবং অসহায়ত্বের সম্মুখীন হয়, তাই সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করার মাধ্যমে শহুরে নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। এছাড়া, শহুরে নিম্ন-মধ্যম এবং মধ্যম আয়ের পরিবারের জন্য বিশেষ সামাজিক সুরক্ষা স্কিম তৈরি করা উচিত যাতে তারা সফলভাবে মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৩
আরকেআর/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।