বরিশাল: বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে পিতৃহীন দুই শিশুর সম্পত্তি দখল এবং গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আরেকটি পক্ষের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আছমা বেগম তার দুই কন্যা শিশুকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন।
বিষয়টি জানতে পেরে আছমা বেগম তার ভাই মো. ইউসুফ তালুকদারকে জানালে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিপক্ষকে কল দেন। এ সময় ওপাশ থেকে ইউসুফ তালুকদারকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং মারধর ও খুন –জখমের হুমকি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে আছমা বেগম বলেন, সাড়ে তিন বছর ও ১৩ বছরের দুটি শিশু সন্তান এবং আমাকে রেখে দুই বছর আগে স্বামী জালাল আহম্মদ মারা যান। তার মৃত্যুর পর থেকে আমার শ্বশুরের ওয়ারিশদের সবার সঙ্গে সু-সম্পর্ক থাকলেও মাইদুল ফকির ও তার সহযোগীরা নানাভাবে আমার স্বামীর সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, তারা ইতোমধ্যে বেশ কিছু জমি দখলেও নিয়েছেন। সর্বশেষ ২০ জানুয়ারি সকালে আমার স্বামীর নামে দলিলকৃত ৫৬ শতাংশ জমির ওপর থাকা বিশালাকৃতির গাছগুলো কাটতে শুরু করেন মাইদুল ফকির ও তার সহযোগীরা।
তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েকটি গাছ কাটার পর বিষয়টি আমি ও আমার অন্য স্বজনরা জানতে পেরে থানা পুলিশকে অবহিত করি। পুলিশ আসতে বিলম্ব করায় ৯৯৯-এ কল দেওয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং গাছ কাটার দৃশ্য দেখতে পায়।
আছমা বেগম বলেন, গাছ কাটার বিষয়সহ জমি দখলের চেষ্টার মতো বিষয়গুলো আগে থেকেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আমরা জানিয়ে আসছি। তবে তাতে কোনোভাবেই আমার স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি রক্ষা করতে পারছি না। দখলবাজরা আমাদের হত্যা ও মারধরের হুমকি দিচ্ছে। সেইসঙ্গে বাড়িতেও প্রবেশে বাধা দেওয়ার কথা বলছে।
তিনি বলেন, ২০ জানুয়ারির ঘটনায় পর আমার ভাই থানায় মামলা দায়েরের জন্য লিখিত অভিযোগ নিয়ে যান। তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছুটিতে থাকায় মামলাটি এখনও দায়ের হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছুটিতে আছেন বলে জানান এবং সেকেন্ড অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই আরিফুর রহমান বলেন, জমিজমার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ। তবে গাছ কাটার খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান এবং সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে আসেন। বর্তমানে সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, আছমা বেগমের পক্ষ থেকে করা অভিযোগ আমরা আমলে নিইনি, এমন বিষয় সত্য নয়। আর দেওয়ানি মামলার বিষয়ে থানার কিছু করার থাকে না, এটি আদালতের বিষয়।
অভিযুক্ত মাইদুল ফকির জানিয়েছেন, ওয়ারিশ সূত্রে তাদের সেখানে জমি রয়েছে। আবার কিছু জমির এওয়াজ-বদলের কথাও ছিল। কিন্তু জালাল আহম্মদের মৃত্যুর পর সেখানে তাদের কোনো জমি নেই, এমনটি বলা হচ্ছে। তাই তারা নিজেদের জায়গা ভোগদখলের জন্য ঘটনাস্থলে গিয়েছেন এবং চারটি গাছও কেটেছেন। পরে প্রশাসনের লোকজন এসে বন্ধ করে দিয়ে গেছে।
তিনি জানান, প্রতিপক্ষ সময় চেয়েছে, তারা এসে বিষয়টির সমাধান করবে। আবার বর্তমান চেয়ারম্যান এলাকায় নেই, তাই তিনি আসা পর্যন্ত যেভাবে যা আছে সেইভাবে তা রাখা হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিলন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে আমি এলাকার বাইরে রয়েছি, তবে বিষয়টি আমি শুনেছি। যতদূর জানি গাছ কেটে কেউ নেয়নি, কাটার চেষ্টা করেছিল। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ। এ নিয়ে পরিষদে লিখিতও দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষকেই নোটিশ করে এনে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৩
এমএস/আরএইচ