ঢাকা: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমদ বলেছেন, এক মন্ত্রণালয়কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে বিরাগভাজন হয়েছে তার প্রতিষ্ঠান। পরে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে সেই জরিমানার টাকা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ের কনফারেন্স রুম পদ্মায় ‘মানবাধিকার সুরক্ষায় গণমানুষের প্রত্যাশাঃ গণমাধ্যম ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সমন্বিত প্রয়াস’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সেমিনারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ড. কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করার। সাংবাদিকরা আমাদের সমালোচনা করলেও তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই, কাজ করতে চাই।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে সাংবাদিকরা যে কোনো সময় কথা বলতে পারেন জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের বিষয়ে আমরা সচেতন। আমি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা অনেক পছন্দ করি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তাদের কিছু পত্রিকা দিয়েছি প্রতিদিন সেগুলো পড়ে সেখানে থেকে সুয়েমেটো নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের নিয়ে অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কমিটি করা হয়েছে, যোগ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের নামে মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সেজন্য এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে না, কমিশনের আইনে আছে এটা।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে নিম্ন আদালত পর্যন্ত যেতে হবে। কতটুকু পর্যন্ত যান?
পৃথিবীর অন্য দেশে কমিশন সফল হলেও বাংলাদেশে কেন নয়? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নবগঠিত ষষ্ঠ কমিশন ১ মাস ১৪ দিনের কার্যদিবসে ১৯০টি অভিযোগ নিয়েছে। একই সঙ্গে ৩৪টি নোট নিয়েছে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে।
মানবাধিকার কমিশনের পদক্ষেপ সম্পর্কে ড. কামাল উদ্দিন বলেন, বান্দরবানের ম্রোদের ৩৫০ একর জমি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে খাবার পানি ও ত্রাণ দিতে মন্ত্রণালয়কে বলেছে কমিশন। এরপর রিপোর্ট চেয়েছি, সেখানে ঘাটতি দেখা গেছে। তারপর আবার রিপোর্ট তৈরি করেছি।
তিনি বলেন, এসময় আবারও বাড়ি পুড়িয়েছে কোম্পানিটি। আমাদের কমিশনে একজন জেলা জজ আছেন, তাকে তদন্ত করতে পাঠিয়েছি। তারপর প্রথমবারের মতো তিনটি পার্বত্য জেলায় সেমিনার করেছি। উপজাতিদের প্রতিনিধি হিসেবে কংজুরী চৌধুরী কমিশনের সদস্য হয়েছেন। সেখানে আর সহসা কেউ আগুন লাগানোর সাহস করবে না।
মানবাধিকার কমিশন সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে ড. কামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিষয়ে তদন্ত করতে। সেই সীমাবদ্ধতা আমরা সংশোধনের চেষ্টা করছি। কারণ যে কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জনগণের অধিকার রয়েছে তার প্রতিকার পাওয়ার।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নামের সংগঠনটি ভুয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, কমিশন নাম দিয়ে সংগঠন থাকতে পারে না। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ভুয়া সংগঠন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা না থাকলে ভালো গণতন্ত্র বলা যাবে না। সারাবিশ্বে ১৩ শতাংশ মানুষ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পায়।
জাতীয় প্রেসক্লাব মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে কাজ করতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক রকম চাপ আসবে, চাপ মোকাবিলা করে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাগর-রুনি হত্যা মামলায় ৯৫ বার সময় নিয়েও তদন্ত শেষ করতে পারে না আমাদের সংস্থা। এখানে মানবাধিকার কমিশন কী করেছে। মানবাধিকার কমিশন সুপারিশ করলো, কিন্তু ফলোআপ হলো না। তাহলে মানুষ কমিশনের ওপর আস্থা রাখবে কী করে?
এসময় মানবাধিকার কমিশনের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলে পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এদেশে তাদের কাজ কী সেটা পরিষ্কার করা দরকার। শুধু সুপারিশ করাই কি এই কমিশনের কাজ?
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য সেলিম রেজার সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমদ।
সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক কাজী আরফান আশিক, সিনিয়র সাংবাদিক সোহরাব হোসেন, আইনজীবী ড. তানিয়া হকসহ মানবাধিকার কর্মী ও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪, জানুয়ারি ২৪, ২০২৩
এনবি/এমএমজেড