ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

খুমেক হাসপাতাল গেট থেকে নবজাতক চুরি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
খুমেক হাসপাতাল গেট থেকে নবজাতক চুরি ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের গেট থেকে নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নবজাতকের বাবা তোরাব আলী বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের ফকিরহাটের পিলজঙ্গে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার স্ত্রীকে নিয়ে আসি। দুপুর একটা ৪০ মিনিটের দিকে আমার ছেলে হয়। বিকেলে বাচ্চা নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করতে যাই। তখন অ্যাম্বুলেন্স চালকের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরে সেই চালক গাড়ি নিয়ে এসে আমাদের নিয়ে যেতে চান। কিন্তু তিনি আমাদের যে গাড়ি দেখিয়েছেন সেটা না এনে ছোট একটি গাড়ি নিয়ে আসেন।

তিনি আরও বলেন, তখন আমার শ্বশুর বলেন, আপনার গাড়ি ছোট এতে আমাদের হবে না। আমরা অন্য গাড়ি নিয়ে যাব। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সের চালক তা শুনতে রাজি নয়। সে বলে যেমন টাকা দিবেন তেমন তো গাড়ি পাবেন। এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে ওই চালক ও তার লোকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হতে হতে মারামারি শুরু হয়ে যায়। আমার স্ত্রীর বোনের কাছে বাচ্চা ছিল। সে যখন দেখে আমাদের মারছে তখন অস্থির হয়ে যায়। তার পাশে থাকা এক মহিলা তাকে বলে আমার কাছে বাচ্চা দিয়ে ওদের ঠেকান।

নবজাতকের বাবা বলেন, আমার স্ত্রীর বোন ওই মহিলাকে তার ভাবি মনে করে বাচ্চা দিয়ে মারামারি ঠেকাতে যান। মারামারি শেষে এসে দেখি বাচ্চাসহ সেই মহিলা আর নেই। আমি দরিদ্র মানুষ। প্রশাসনের কাছে আমার ছেলেকে খুঁজে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

নবজাতকের নানা বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা বাড়ি চলে যাবো এমন সময় চালক গাড়ি নিয়ে আসে। তারা বলে একহাজার ৬০০ টাকা। আমরা বলি এক হাজার টাকা দিব। এর পর তারা বলে একহাজার ৪০০ টাকা। আমরা বলি একহাজার ২০০ টাকায় পৌঁছে দাও। ওরা বলে তোমরা ছোট গাড়িতে যাও। এভাবে কথা বলতে বলতে মারামারি শুরু করে।

নবজাতকের মা রানী বেগম অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে আহাজারি করে বলেন, ১১ বছর পর আমার ছেলে হয়েছে। ডাক্তার বলেছে আমার আর বাচ্চা হবে না। আমার শরীরে রক্ত কম। আমার বাচ্চাকে আমি কোলে নিতে পারিনি। আপনারা আমার বাচ্চা এনে দেন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. রবিউল হাসান বলেন, বিকেলে জানতে পেরেছি হাসপাতালের গেট থেকে একদিন বয়সী ওই নবজাতক চুরি হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর তারা বাড়ি ফেরার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার সময় চালকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় নবজাতক তার খালার কোলে ছিল। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মাস্ক পড়া এক নারী নবজাতককে কোলে দেওয়ার কথা বলেন। হুড়োহুড়ির মধ্যে ওই নারী নবজাতকে নিয়ে চলে যান। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

নবজাতকের মামা মোস্তফা জানান, আমার বোন রানি বেগমের প্রসব বেদনা উঠলে ফকিরহাট উপজেলা থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। আজ দুপুরে নবজাতক জন্ম নিলে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের ছাড়পত্র দেয়। গেটের সামনে এসে গাড়ি ভাড়া নিয়ে উজ্জ্বল নামের চালকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ওই চালক গাড়ির চাবি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন। উজ্জ্বল ও তার সহযোগী আশিক ও বাবু  তার ওপর উত্তেজিত হয়ে মারমুখী আচরণ করে। তাদের সঙ্গে একজন নারীও ছিল। ওই নারী নবজাতককে তার খালা সোনিয়া বেগমের কাছে নিয়ে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যান। ঘটনার পর থেকে হাসপাতাল এলাকায় বাচ্চাটির খোঁজ নিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালে কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা ঘটনার সময় সহযোগিতা করেননি বলেও অভিযোগ করেন নবজাতকের মামা।

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) নাহিদ হাসান মৃধা বাংলানিউজকে বলেন, অপহৃত নবজাতকের পরিবার থানায় এসে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। আমরা তাৎক্ষনিকভাবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

তবে র‌্যাব-৬ এর একটি সূত্র জানিয়েছে অপহৃত নবজাতক উদ্ধারের জন্য র‌্যাব সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করে কাজ করছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
এমআরএম/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।