ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সরিষা চাষে ঝুঁকছে কৃষক

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৩
ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সরিষা চাষে ঝুঁকছে কৃষক

ঢাকা: বৈশ্বিক মন্দা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে অস্থিরতা দেখা দেয়। যুদ্ধের কারণে সূর্যমুখী তেলের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সয়াবিন ও পাম অয়েলের ওপর চাপ পড়ে।

চাহিদার সঙ্গে দিন দিন সয়াবিনের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়ে ক্রেতা সাধারণ। এ শস্যের দামের কারণে গ্রাম ও শহরে সরিষার তেলের চাহিদা তুলনামূলক বাড়তে থাকে। দেশে ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি চোখে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে সরিষা চাষে ঝুঁকেছে কৃষক। ফলন ভালো হওয়ার আশায় এ ফসলেই স্বপ্ন বুনছে দেশের প্রান্তিক কৃষক।

গত কয়েক বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে প্রায় দ্বিগুণ জমিতে আবাদ হচ্ছে সরিষার। হলুদ ফুলে ভরে গেছে কৃষকের মাঠ। সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনার কথা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন দেশের প্রান্তিক কৃষক।

কৃষকরা বলছেন, সরিষা চাষে খরচ ও পরিশ্রম দুটোই কম হয়। আবাদেও কষ্ট কম। এছাড়া তেলের দাম অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো। ফলে নিজের চাহিদা মিটিয়ে দেশেও ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণে এবার সরিষা চাষে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন তারা।

বরিশালের কর্ণকাঠি ইউনিয়নের প্রান্তিক কৃষক ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক বছর সরিষার তেমন দাম না থাকায় আবাদ করিনি। সয়াবিন তেলের দাম বাড়ায় এ বছর দুই একর জমিতে সরিষা আবাদ করছি। এতে করে নিজের সংসারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রিও করতে পারবো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষা থেকে ভালো লাভ হবে।

সয়াবিনের দাম বাড়ায় আমদানি নির্ভরতা কমানোর সুযোগ এসেছে। এর আগে কম দাম থাকায় কৃষকরা সরিষা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। এখন ৫ লিটার সয়াবিন কিনতে প্রায় এক মণ ধানের সমান দাম দিতে হয়। ফলে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ে কৃষকদের। আগামীতে এ ফসলের আবাদ কয়েকগুণ বাড়বে বলে মনে করেন ধামরাইয়ের চৌহাট্ট ইউনিয়নের কৃষক রাশেদুল ইসলাম।

সরকারের পক্ষ থেকেও তেলের আমদানি কমাতে সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ বছর বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ সরিষার চাষ হয়েছে। সরিষার তেল এবং আস্ত সরিষা- দুটোরই দাম বাড়ায় কৃষকরা এতে আগ্রহী হচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার ৮ লাখ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হচ্ছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ লাখ ৪২ হাজার হেক্টরের বেশি। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ক্রপস ইউং’র ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রবিউল হক মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, ৮ লাখ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হওয়া আমাদের জন্য ইতিবাচক। এ ছাড়া আবহাওয়াও এখন পর্যন্ত ভালো। ফলে ভালো ফলনের আশা করছি। আগামীতে সরিষা দিয়েই দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সরকার বলছে, দেশের অভ্যন্তরে ভোজ্যতেলের যে চাহিদা রয়েছে আগামী তিন বছরের মধ্যে তার ৪০-৫০ শতাংশ মেটানো হবে সরিষার তেল দিয়ে। এ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চলতি বছর থেকেই সরিষার চাষ বাড়াতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে ভোজ্যতেলের আমদানি কমাতে পরিকল্পিতভাবে দেশে সরিষার আবাদ বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। দেশের মোট ভোজ্যতেলের চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ এখন দেশে উৎপাদিত হয়। বাকি ৯০ শতাংশ আমদানি করা হয়। আমদানিতে ২ থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলার খরচ হয়। এমন প্রেক্ষাপটে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আগামী তিন বছরে মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে পূরণ করার লক্ষ্য নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

সরিষা চাষে কৃষকরা যেভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক। এটি কৃষি ক্ষেত্রে সরকারের আরও একটি সাফল্য। সরিষার চাষাবাদ জনপ্রিয় করতে কৃষক পর্যায়ে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করা গেলে তারা একদিকে যেমন লাভবান হবে, অন্যদিকে উৎপাদন বাড়বে। এতে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৩
এসএমএকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।