ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, (ঢাবি): ২০২২ সালে আত্মহত্যা করেছেন ৫৩২ শিক্ষার্থী। স্কুল-সমমান পর্যায়ে আত্মহত্যা করেছে ৩৪০ শিক্ষার্থী।
শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্যগুলো জানায় আঁচল ফাউন্ডেশন। ‘স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা; সমাধান কোন পথে?’ শীর্ষক সমীক্ষার ফলাফলে এ তথ্য উঠে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সারা দেশের মোট আটটি বিভাগে আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে। এর সংখ্যা ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ১৬ দশমিক ৮১। একইসঙ্গে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ।
আত্মহত্যার কারণগুলো উল্লেখ করে সম্মেলনে বক্তারা বলেন, মান-অভিমানের কারণে বেশি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে অভিমানের করে। এদের বড় অংশেরই অভিমান হয়েছে পরিবারের সাথে। এছাড়া আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া, শিক্ষক কর্তৃক অপমানিত হওয়া, পরীক্ষায় অকৃতকার্য, গেম খেলতে বাঁধা দেওয়া, মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়া, পড়াশোনার চাপ অনুভব করা ও পারিবারিক চাপে আত্মহত্যা করার ঘটনাও উঠে এসেছে রিপোর্টে।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট শাহরিনা ফেরদৌস, আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ। ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবনী এতে তথ্য উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে তানসেন রোজ বলেন, স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে শিক্ষকরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে তাদের সমস্যাগুলো শুনে মেন্টরের ভূমিকা পালন করতে পারেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই বয়সে একজন শিক্ষার্থীর সঠিক পরামর্শ পাওয়ার জায়গা অপ্রতুল। আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমাদের শিক্ষক ও বাবা মায়েদের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে।
শাহরিনা ফেরদৌস বলেন, ২০২২ সালের এই জরিপে দেখা যাচ্ছে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর কিশোরীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা অনেক বেশি। অর্থাৎ তারা যে বয়ঃসন্ধিকালের সময়টি পার করছে, এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং এ সময়ে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এবং সচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। কি কারণে তাদের সংখ্যা গতবছর এত বেশি ছিল তার কারণগুলো অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। বিশেষ করে তাদের পারিবারিক বন্ধন, ব্যক্তিগত চাহিদা, সামাজিক অবস্থান- এসব বিষয় জানার প্রয়োজন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা মোকাবেলায় আঁচল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১১ টি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে-
হতাশা, একাকীত্ব ও নেতিবাচক ভাবনা থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখতে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ বৃদ্ধি; সন্তানদের মানসিক বিকাশ এবং তাদেরকে সহানুভূতির সাথে শুনতে ও বুঝতে অভিভাবকদের জন্য প্যারেন্টিং কার্যক্রম চালু; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষক-কর্মচারীদের আচরণ ও পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে কৌশলী ও সহানুভূতিশীল হতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা;
স্কুল, কলেজ পর্যায়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধী পোস্টার প্রদর্শন; প্রতিটি আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবারের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে ও দায় বৃদ্ধিতে তাদের আইনি বাধ্যবাধকতার অন্তর্ভুক্ত করা; স্কুল-কলেজের ছাত্রকল্যাণ ফান্ডের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা; প্রেম-প্রণয় ঘটিত সম্পর্কে বা অজ্ঞাতসারে ধারণ করা গোপন ছবি, ভিডিও ইত্যাদি প্রচার তথা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গ ও সাইবার ক্রাইমের বিষয়ে শাস্তি উল্লেখপূর্বক বিশেষ প্রচারাভিযান পরিচালনা; স্কুল-কলেজ পর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা সতর্কতা চিহ্ন সম্পর্কে ধারণা প্রদান; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেন্টাল হেলথ কর্নার; কার্যকর মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য ক্লিনিক্যাল সুবিধার সহজলভ্যতা নিশ্চিত ও শিক্ষার্থীদের আবেগীয় অনুভূতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল ও ধৈর্য্যশীলতার পাঠ শেখানো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৩
এসকেবি/এমজে