খুলনা: প্রাচীন মুদ্রা ও যুদ্ধাস্ত্র, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানিতে ব্যবহৃত বিষমিশ্রিত বেয়নেট, মোগল সাম্রাজ্যে ব্যবহৃত ঢাল ও আঙুলের বর্ম, সপ্তদশ শতাব্দীতে রৌপ্য ও তামার সংমিশ্রণে হাতে তৈরি প্লেট, সোভিয়েত ইউনিয়নের নৌবাহিনীর সাবমেরিনে ব্যবহৃত চাবি দেওয়া ঘড়ি, প্রাচিত পেপার, পত্রিকাসহ শত শত প্রাচীন দুর্লভ সামগ্রী সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যা দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দর্শনার্থীরা।
শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) খুলনার সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার এনজিও ফোরাম মিলনায়তনে খুলনা কালেক্টরস সোসাইটি আয়োজিত শৌখিন সংগ্রাহকদের সামগ্রীর এই প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিনেও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পরার মতো।
সরেজমিনে বিকেলে দেখা যায়, প্রচুরসংখ্যক মানুষ প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন। দুর্লভ ও পুরোনো জিনিস এবং দলিলাদির ছবিও তুলছেন কেউ কেউ। অনেকে প্রদর্শনীতে মুঠোফোনে সেলফিও তুলছেন। কাউকে কাউকে সংগ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে নোট খাতায় দুর্লভ উপকরণের বিষয়াদি লিখতেও দেখা গেছে।
সংগ্রাহক ও নজরুল গবেষক সৈয়দ আলী হাকিম বাংলানিউজকে বলেন, ইতিহাস ঐতিহ্যের অনেক স্মারক নতুন প্রজন্মের কাছে অচেনা। তাদের সামনে সেসব দুর্লভ সংগৃহীত বস্তু উপস্থাপন করতে এ আয়োজন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নানা ঐতিহ্যিক জিনিসপত্র ও উপকরণ সংগ্রহ করে এখানে প্রদর্শন করছেন সংগ্রাহকরা। যা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ইতিহাস ঐহিত্যের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক কিছুই অনেক সংগ্রহ করতেন। জ্ঞান বৃদ্ধি করা যায় এমন কিছু সংগ্রহ করা হতো। এখন তো সবাই মোবাইল ফেসবুক নিয়ে আসক্ত। এর বাইরে যে একটি জগত আছে। অন্য কিছু দিয়ে যে আনন্দ উপভোগ করা যায় সেটা উপস্থাপন করার জন্যই এ প্রদর্শনীর আয়োজন। ভারত ও ইংল্যান্ডসহ দেশের মোট ৩১জন সংগ্রাহক তাদের সংগ্রহৃত বস্তু প্রদর্শন করছেন। এখানে বিভিন্ন ধরণের জিনিস রয়েছে। কয়েন, ব্যাংক নোট, কুপি বাতি, পুরাতন এন্টিকের অনেক দ্রব্যসহ প্রায় ১০ হাজারের উপরে আইটেম আছে। আড়াই হাজার বছর থেকে বর্তমান পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে কয়েন আছে। কয়েনের মধ্যে ভিন্নতা। ব্যাংক নোটের ক্ষেত্রে যে কত কারকাজ আছে তা এখানে এলে দেখা যাবে। এখানে যে ব্যাংক নোট দেখানো হচ্ছে সেগুলো কেউ কখনও দেখে নি। দুই টাকা থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে ১ নং সিরিয়ারের প্রদর্শন করা হচ্ছে। আমাদের উদ্দেশ্যে এটা সবার মধ্যে এটা ছড়িয়ে দেওয়া। সবাই যাতে সংগ্রহ করতে উৎসাহীত হয়। এতে মনে আনন্দ পাবে। ইতিহাস জড়িত হওয়ায় অনেকে এখানে এসে অনেক কিছু শিখতে পারবে জানতে পারবে।
প্রদর্শনীতে রয়েছে, শতবর্ষ প্রাচীন লাড্ডু গোপাল মূর্তি, গহনার বাক্স, পিতলের আয়রন, বেদেদের বাঁশি, প্রাচীন বাটখারা, বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে প্রচলিত মুদ্রা ও ব্যাংক নোট। বঙ্গবন্ধুর ছবিসংবলিত অর্ধশতাধিক ডাকটিকিটমহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য দেওয়া খেতাব ও মেডেল, পিতলের হুক্কা, পাথরের হুক্কা, মাটির হুক্কা, হরেক রকম ও বাহারি সব ম্যাচবক্স, বিভিন্ন প্রকারের মেডেল, আদিবাসীদের গহনা, প্রাচীন আমলের কেটলি, , রাজাকারদের বেতনের নথি, পানের বাটা, গোল্ড কয়েনসহ অনেক কিছু।
সংগ্রাহকরা জানান, পূর্বসূরিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ঐতিহ্যিক জিনিসপত্র তারা যত্নের সঙ্গে এখনো সংরক্ষণ করে রেখেছেন। বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে এসব জিনিসের পরিচয় করিয়ে দিতেই প্রদর্শনীতে এসব রেখেছেন। অনেকের সংগ্রহে নানা দুর্লভ জিনিস ও উপকরণ রয়েছে। অন্যকে এসব দেখিয়ে ইতিহাস ও ঐতিহ্যপ্রেমী করার উদ্দেশ্যেই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও ধারাবাহিকভাবে এমনটা করা হবে। কারণ, এসব প্রদর্শনীতে এসে মানুষের জ্ঞান ও শিক্ষার বিকাশ ঘটবে বলে তারা মনে করেন।
সংগ্রাহক এম এম হাসানের কাছে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের যত ডাক টিকিট আছে তা সবই তার আছে আছে। শখের বসে তিনি এসব সংগ্রহ করেছেন। প্রদর্শনীতে তার এসব ডাক টিকিট দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
বাচ্চাকে নিয়ে প্রদর্শনী দেখতে আসা মাহমুদ বিল্লাহ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি প্রদর্শনীর কথা। বাচ্চাকে নিয়ে এসে খুব ভালো লাগছে। ও পুরানো দিনের অনেক কিছু সম্পর্কে জানতে পেরেছে।
কলেজ ছাত্র ফেরদৌস রহমান খান বলেন, প্রদর্শনীতে এসে ভীষণ ভালো লাগছে। অনেক কিছুর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে।
দেবব্রত চক্রবর্তী নামের এক দর্শনার্থী বলেন, মেয়েকে সাথে নিয়ে এসেছি দুর্লভ বস্তুর প্রদর্শনীতে। সে অনেক কিছু আজ চোখে দেখেছে। যা আগে বইতে ছবি দেখেছে। এর মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পেরেছে।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয়বারের মতো বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ৩১ জন সংগ্রাহকের হাজার বছরের দুর্লভ মুদ্রা, প্রাচীন সামগ্রী, তৈজসপত্র, তালা-চাবি, কুপিবাতি, ধাতব মেডেল, ডাকটিকিট, দেশলাইসহ নানা দ্রব্য। তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনী শনিবার (২৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত চলবে প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭ , ২০২৩
এমআরএম/এসএম