ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দেড়যুগ ঘরছাড়া, ফিরছেন লাশ হয়ে!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৩
দেড়যুগ ঘরছাড়া, ফিরছেন লাশ হয়ে!

ফেনী: ফেনী শহরের পথে-প্রান্তরে যারা একটু হলেও হেঁটেছেন তাদের অনেকেই বুলবুলকে চেনেন। খুব কম মানুষ পাওয়া যাবে তাকে চেনেন না।

শহরের অলি-গলিতে আরও কত শত পাগলের আনাগোনা, কে রাখে কার খবর। কিন্তু অদ্ভুত চরিত্রের বুলবলকে চেনার আলাদা কারণ ছিলো।

ছেঁড়া বস্তার এক টুকরো পরেই সারা শহর হেঁটে বেড়াতেন। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা- সব সময় একভাবেই থাকতেন তিনি। দেখতে পাগল মনে হলেও ইংরেজি পত্রিকা পড়তে পারতেন। পৃথিবীর নানা প্রান্তের ভূ-রাজনীতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সব জানতেন। বলতে দিলে সারা পৃথিবীর আনাচে-কানাচের খবর বলে দিতে পারতেন। দেশের রাজনীতির মূল্যায়নও করতে পারতেন সূচারুভাবে।
 
ঘর ছেড়ে দেড় যুগ আগে এসছিলেন ফেনী শহরে। চষে বেড়িয়েছেন শহরের অলি-গলি। কয়েকবার পরিবার নিতে চাইলেও যাননি। এ শহরটার মানুষও তাকে আপন করে নিয়েছিলো। আদর করে কেউ ডাকতো রাষ্ট্রপতি, কেউ ডাকতো এনএসআই। আবার অনেকেই বলতো আমাদের বুলবুল। অবশেষে লাশ হয়েই ফিরছেন বুলবুল।  

দীর্ঘ ১৮ বছর পর আতাউর রহমান বুলবুলের (৫০) মরদেহ যাবে নিজ জেলা জয়পুরহাটে। ২০০৬ সালে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে জয়পুরহাট থেকে ফেনীতে আসার পর থেকে বুলবুলের নাম পরিচয় না মিললেও মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সূত্র ধরেই পরিচয় মিলেছে।  

বুলবুল দীর্ঘদিন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে অজ্ঞাত পরিচয়ধারী হিসেবে চিকিৎসাধীন থেকে বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) দিনগত রাতে মারা যান। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়-এর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা ও মৃত্যুর পর বুলবুলের ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় খোঁজা হলে সন্ধান মেলে।  

জানা যায়, প্রায় দেড়যুগ ধরে ফেনী শহরের অলিতে-গলিতে, রাস্তায়-সরকারি দপ্তরে বস্তা পরে হেঁটে চলা একজন ছিলেন বুলবুল। খাওয়া-দাওয়ায় অনাগ্রহী এ ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়নি এমন ব্যক্তি ফেনীর স্থায়ী বাসিন্দাদের মাঝে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে এই দীর্ঘ ১৮টি বছরে কখনো কাউকে বিরক্ত করতেন না বুলবুল। নিজের মত নিজেই থাকতেন তিনি। রাস্তা-ঘাট, রেলপথ, বাসস্ট্যান্ডসহ ফেনী শহরের সব স্থানেই ছিলো বুলবুলের পদচারণা।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়ের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ দুলাল তালুকদার জানান, গত সপ্তাহে বুলবুল অসুস্থ হলে সহায়ের তত্ত্বাবধানে আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। মানসিক ভারসাম্যহীন এই লোকটি দীর্ঘদিন যাবত ফেনী শহরে থাকলেও কেউ তার সন্ধান দিতে পারেনি। বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হলে আমরা তার মরদেহ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ি। পরে আমাদের সহায়ের সদস্যসহ অন্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুলবুলের ছবি দিয়ে পরিবারের সন্ধ্যান চেয়ে পোস্ট দিলে তার পরিচয় মেলে। তার নাম আতাউর রহমান বুলবুল। তিনি জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের আবদুস সাত্তার মাস্টারের ছেলে।

বুলবুলের সহদোর রেজাউল করিম রিপন বলেন, আমার ভাই বুলবুল ১৯৮৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করার পর মানসিক সমস্যাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ২০০৬ সালে বাবা মাস্টার আবদুস সাত্তারের মৃত্যুর পর হঠাৎ আমার ভাই বুলবুল নিখোঁজ হয়। প্রায় ১০/১২ বছর পর আমরা তার ফেনীতে থাকার বিষয়টি জানতে পেরে তাকে নিয়ে আসতে যাই। কিন্তু অনেক জোরাজুরি করেও তাকে নেয়া যায়নি।  

এরপর থেকে যাতায়াতের দূরত্বের কারণে বছরের পর বছর তার খবরাখবর আমরা আর পাইনি। শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) ফেসবুকে ছবি দেখে আমাদের এক আত্মীয় বুলবুলের মৃত্যুর বিষয়টি আমাদের জানায়। আমার ছোটভাই ও বড়াইল ইউপি সদস্য মশিউর রহমান লেবু ইতোমধ্যে মরদেহ আনতে ফেনীতে গেছেন। তার মরদেহ ফেনী থেকে জয়পুরহাটে এনে দাফন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৩
এসএইচডি/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।