বরিশাল: নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা সিঙ্গাপুর প্রবাসী নুরুল আমিনকে হত্যা করে চাচাতো ভাই পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও গ্রেফতার হয়েছেন তানিম মিয়া (২০) নামে নিহতের বেয়াই (ঘাতক চাচাতো ভাইয়ের শ্যালক)।
শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তানিম মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার তানিম মিয়া বরিশালের মুলাদী উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের খোরশেদ মীরের ছেলে। এরই মধ্যে তিনি বরিশালের একটি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
নৌ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ অক্টোবর সন্ধ্যায় মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের আড়িয়াল খাঁ নদীর সাহেবের চর এলাকা থেকে হাত-পায়ে ইট বাঁধা অর্ধগলিত অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের পরদিন (১২ অক্টোবর) নৌ-পুলিশ বাদী হয়ে মুলাদী থানায় একটি মামলা দায়ের করে। তবে বিভিন্ন থানায় সংবাদ পাঠিয়ে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে বরিশালেই দাফন করা হয়।
পরবর্তীতে ১৪ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীর করা একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সূত্র ধরে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত হয়। জানা যায়, নিহত থানায় জিডি করা নারী সোনিয়া আক্তারের ভাই ও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চরবক্তাবলী উপজেলার লক্ষ্মীনগর গ্রামের পিয়ার আলী ফকিরের ছেলে নুরুল আমিন।
মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর নৌ-পুলিশের ইনচার্জ (পরিদর্শক) প্রদীপ কুমার জানান, ঘটনার তদন্তে নেমে নিহত নুরুল আমিনের চাচাতো ভাই কামরুল ইসলামের শ্বশুর খোরশেদ আলম মীরকে আটক করার পর হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে এরই মধ্যে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দুই ঘাতকের মধ্যে একজন কামরুল ইসলাম সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যায় এবং অপর জন তার শ্যালক তানিম মিয়া পালিয়ে ছিলো বলে জানতে পারে পুলিশ।
পরবর্তীতে তানিম মিয়া আত্মগোপনে থেকে সৌদি আরবে যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পালানোর চেষ্টা করে। বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ তাদের নজরদারী বাড়িয়ে দেয়।
প্রদীপ কুমার বলেন, পালিয়ে দেশ ছাড়ার সময় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে তানিম মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে শনিবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বরিশালের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। তখন সে নুরুল আমিনকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। যাতে গ্রেফতার তানিম ও তার ভগ্নিপতি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে পলাতক কামরুল ইসলাম এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে উঠে এসেছে।
এদিকে হত্যায় ব্যবহৃত ট্রলার জব্দ করা হয়েছে জানিয়ে পরিদর্শক প্রদীপ কুমার আরও জানান, হত্যার শিকার নুরুল আমিন ও কামরুল ইসলাম চাচাতো ভাই। দুজনেই সিঙ্গাপুরে থাকতো। সেখান থেকে নিহত নুরুল আমিন দেশে ফিরে আসেন। কামরুল গ্রুপ ভিসায় সিঙ্গাপুরে লোক নেয়ার প্রলোভন দিয়ে নুরুল আমিনের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা নেয়। কিন্তু কাউকে সিঙ্গাপুরে নিচ্ছিলো না, আবার টাকাও ফেরত দিচ্ছিলো না।
পরিদর্শক প্রদীপ জানান, লোকজনের ভয়ে গত ৭ অক্টোবর গোপনে বাংলাদেশে আসেন কামরুল। দেশে ফিরে এসে বরিশালের মুলাদী উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে তার শ্বশুর বাড়িতে আত্মগোপন করেন। পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে নুরুল আমিনকে মুলাদীতে ডেকে নিয়ে আসেন। ১০ অক্টোবর সেখান থেকে নুরুল আমিন তার চাচাতো ভাই কামরুল ও কামরুলের শ্যালক তানিমের সঙ্গে ট্রলারযোগে আড়িয়াল খাঁ নদীতে ঘুরতে বের হন।
তানিম মিয়ার জবানবন্দির বরাতে প্রদীপ কুমার জানান, ঘটনার সময় ট্রলারে বসে নুরুল আমিন মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। এ সময় পেছন থেকে নাইলনের রশি তার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করেন কামরুল। পরে হাত ও পায়ে ইট বেঁধে নুরুল আমিনের মরদেহ আড়িয়াল খাঁ নদীতে ফেলে দেন দুজনে। তাকে হত্যার পর ১৩ অক্টোবর কামরুল সিঙ্গাপুর ফিরে যান।
উল্লেখ্য, কামরুল ইসলাম নিহত নুরুল আমিনের চাচা হানিফ ফকিরের ছেলে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
এমএস/এনএস