ধামরাই (ঢাকা): ঢাকার ধামরাইয়ে কোনো ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছেনা অবৈধ ইটভাটার পরিবেশ দূষণের মহা উৎসব। আদালতের নির্দেশনা থাকায় নাম মাত্র কয়টি ইটভাটায় অভিযান চললেও সবুজে ঘেরা ধামরাই জুড়ে চলছে অর্ধশতকের বেশি অবৈধ ইটভাটা।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে সরজমিনে ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নের ডাউটিয়ায় অবস্থিত অবৈধ এমবিসি (মা) ব্রিকস ও ইউএসএ (আমেরিকান) ব্রিকস এ গিয়ে দেখা যায়, উৎসবের মত ইট তৈরির কাজ করছেন শ্রমিকরা। অবৈধভাবে কৃষকের জমির মাটি কেটে ভাটাগুলোতে পাহাড় সমান উচু করেছে। এছাড়া সম্প্রতি কয়েকটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ভাঙা হলেও সেগুলো পুনরায় ইট তৈরির কাজ শুরু করেছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র ও ইটভাটা মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, ঢাকার ধামরাইয়ে প্রায় ১৭০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৭১টি ইটভাটা কোনো রকম বৈধতা ছাড়াই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বাকি ইটাভাটাগুলোর মধ্যে কিছু কিছু ভাটার সর্ম্পূণ অনুমোদন নেই। বেশিরভাগ ভাটারই জেলা প্রশাসনের অনুমোদন থাকলেও নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। প্রতিবছর ৩০ লাখ টন মাটি যায় ধামরাইয়ের ইটভাটাগুলোতে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ধামরাই উপজেলার দুই ক্ষমতাসীন জনপ্রতিনিধির সুপারিশে এই অবৈধ ইটভাটা দুটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া বাকি অবৈধ ইটভাটা গুলোর বিরুদ্ধেও এমন অনেক অদৃশ্য কারণেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
আরও জানা যায়, তারা (ভাটা মালিকরা) উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে ইটাভাটা এক বছরের জন্য পরিচালনা করার একটি চুক্তি করে নিয়েছে। এ বছরের পর এই অবৈধ ইটভাটাগুলো আর চলতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ইটভাটা কর্তৃপক্ষ। শুধু এই দুইটি ব্রিকসই নয় আরও ৭১টি অবৈধ ব্রিকস রয়েছে ধামরাইয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নে। সেগুলোরও একই অবস্থা।
এ ব্যাপারে ডাউটিয়া এলাকার অবৈধ মা ব্রিকসের মালিক আজহার আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি দাওয়াতে এসেছি। এখানে অনেক শব্দ, আপনার সঙ্গে পরে কথা হবে বলে ফোনের লাইন কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেন নাই।
মা ব্রিকস এ গিয়ে কথা বলতে গেলে ব্রিকসটির ম্যানেজার কামাল বাংলানিউজের প্রতিবেদকের উপর চড়াও হয়ে বলেন, আমার মহাজন থেকে নিষেধ আছে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার। আমাদের ইটভাটার ২০১৮ সাল পর্যন্ত কাগজ ঠিক ছিলো, এখন নেই। ইউএনও সাহেব আমাদের এই বছর চালাতে সময় দিয়েছে, এরপর আর ইটভাটা চলবে না। এর বেশি আর বলতে পারবো না।
একই এলাকার ইউএসএ ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী রোমা আক্তারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি গৃহিণী। ব্যবসা সম্পর্কে আমার স্বামী জানেন। আপনাদের কিছু জানার থাকলে ব্রিকস ফিল্ডে গিয়ে খবর নেন।
ইউএসএ ব্রিকসের ম্যানেজার হায়দার আলী বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। প্রায় ১ মাস হল আমি এখানে জয়েন করেছি। কাগজপত্র বৈধ কিনা সেটাও জেনে আপনাকে জানাতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউএসএ ব্রিকসের পাশের এক স্থানীয় বাসীন্দা বলেন, গত বছরও ইউএসএ ব্রিকসের মালিক রোমা আক্তারকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল এবং ভাটা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এবার শুনেছি উপজেলার এক বড় নেতার সুপারিশে ইউএসএ ব্রিকস ও ভাড়ারিয়া এলাকার প্রিয়াঙ্কা ব্রিকস ভাঙবে না। অথচ ইউএসএ ব্রিকসের পাশের তিনটি ভাটাই উপজেলা প্রশাসন দুইবার করে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাটার ম্যানেজার বাংলানিউজকে বলেন, আমি যতদুর জানি ইটভাটা মালিক সমিতির হস্তক্ষেপে ইউএনও মহোদয় এ বছর কয়েকটি ভাটা চালানোর অনুমতি দিয়েছেন। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।
ধামরাই ইটভাটা সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ১৫৬টি ইটভাটার ভেতর কিছু ইটভাটা অবৈধভাবেই চলে। এই অবৈধ ইটভাটাগুলোতেই অভিযান চলছে। এ বছর ২৫ থেকে ৩০টির ভেতর ভাটায় অভিযান পরিচালনা করেছে উপজেলা প্রশাসন। এখন আমাদের আর মালিক সমিতির কাজ চলে না যার যার মত বাঁচার চেষ্টা করছে। আমরা চোর মানুষ, এই ব্যবসা করা মানে চোরের ব্যবসা করা। প্রতিদিনই অভিযান চলছে
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকি বিষয়টি অস্বিকার করে বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধ ইটাভাটার কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা তাদের সঙ্গে হয়নি। যাদের কাগজ নেই, বা যাদের কাগজ এক বছর ফেল তারাও অবৈধ। তবে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।
কিছু কিছু ইটভাটাগুলো আপনার (ইউএনও) দোহায় দিচ্ছে, বিষয়টি কি জানেন? উত্তরে তিনি বলেন, এই ইটভাটাগুলোর অনুমোদন দেওয়ার বা চালানোরও কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
এসএফ/এসএম