ঢাকা: মোবাইল-ল্যাপটপ আসক্তি থেকে মুক্ত রাখার পাশাপাশি প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিক থেকে শিশুদের রক্ষা করতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
একইসঙ্গে তিনি ন্যায়, সত্য-মিথ্যা পার্থক্যসহ শিশুদের সঠিক শিক্ষা দিতে বলেন।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় শিশু ও পুরস্কার প্রতিযোগিতা ২০২০ ও ২০২১ এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান বিশ্বায়ন ও তথ্য-প্রযুক্তির যুগে শিশুদের নৈতিক শিক্ষা প্রদান অতীব জরুরি। এখন প্রত্যেক ঘরে ঘরে শিশুদের হাতে মোবাইল, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক ডিভাইস, ফলে শিশুরা আজ মোবাইল ফোনে আসক্ত। তারা খেলার মাঠে বেশি যায় না, শিল্প-সাহিত্যচর্চা করে না, প্রকৃতি-পরিবেশ চিনে না। তাই প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিক থেকে সন্তানদের রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদেরই।
সঠিক শিক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শিশুরা আপনাদের স্বপ্নের সারথি। শিশুদের সঠিক শিক্ষা যেমন ন্যায়-নীতি, সত্য-মিথ্যার বিভেদ, সততা, দয়া, দেশপ্রেম, জীবপ্রেম ইত্যাদি দেওয়া মূল কাজ আপনাদের।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তারাই বহন করবে দেশের দায়িত্বভার। এজন্য শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
নিয়মিত লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুদের সৃজনশীল কাজে সম্পৃক্ত করতে অভিভাবকদের বিশেষভাবে অনুরোধ করেন আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, সৃজনশীল মেধাসম্পন্ন প্রজন্ম গড়তে সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রভাব অপরিসীম। বিদ্যার্জনের পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্য ও ক্রীড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিশুদের সম্পৃক্ত করে তাদের মানসিক বিকাশের পথ সুগম করা জরুরি।
আবদুল হামিদ বলেন, শিশুদের আলোকিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব পরিবার থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ সমাজের প্রত্যেকের। শিশুদের সুকুমার বৃত্তি জাগাতে ও মানসিক বিকাশে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। শুধুমাত্র অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের শিশু নয় সবস্তরের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে বৈষম্যহীন মনোভাব নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের শিশুরা যথেষ্ট মেধাবী। তাদের মেধাকে বিকশিত করতে প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ, পরিচর্যা ও অনুপ্রেরণা।
খেলাধুলার প্রতি গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে শিশুরা আত্মপ্রত্যয়ী হতে শিখে, তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় নেতৃত্বের গুণাবলী। দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা কোমলমতি মেধাবী শিশুদের খুঁজে এনে সঠিক প্রশিক্ষণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিল্পী, আঁকিয়ে বা ক্রীড়াবিদ তৈরি করতে হবে যাতে তারা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সফলতা লাভ করতে পারে।
শিশুদের বিকাশে তাদের চাপমুক্ত রাখার পরামর্শ দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, আজকাল লেখাপড়া, খেলাধুলাসহ সবকিছুতেই ছেলেমেয়েদের চেয়ে মা-বাবাদের প্রতিযোগিতাই বেশি। সব মা-বাবাই চায় তাদের ছেলেমেয়ে প্রথম হোক, চ্যাম্পিয়ন হোক। কিন্তু প্রথম ও চ্যাম্পিয়ন তো একজনই হয়। তাই ছেলেমেয়েদের মাত্রাতিরিক্ত চাপ দেবেন না, অযথা অভিভাবকত্ব করবেন না। মনে রাখবেন শিশুর রাজ্যে অনধিকার প্রবেশ তাদের মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে।
তিনি বলেন, বাবা-মা ও অভিভাবক হিসেবে শিশুর ধারণক্ষমতা বিবেচনা করেই তাকে শিক্ষা দেবেন। তাহলেই দেখবেন একদিন এসব শিশুরাই কালজয়ী হয়ে উঠবে। ছেলেমেয়েদেরকে লেখাপড়া ও খেলাধুলায় প্রথম বা চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখলেই চলবে না পাশাপাশি মানসিকভাবে তারা কতটুকু বেড়ে উঠছে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শিশুরাই একদিন বড় হয়ে আলো ছড়াবে। সেই আলোয় বাংলাদেশকে তারা সমৃদ্ধ করবে। সত্য, সুন্দর এবং সততার সঠিক চর্চার মধ্য দিয়ে শিশুদের গড়ে তুলতে পারলে আগামীতে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে আরও সমৃদ্ধ। আমাদের বর্তমান অগ্রগতি হবে সুসংহত।
তিনি বলেন, প্রতিটি শিশুর একটা ব্যক্তিত্ব আছে। এই ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করার সুযোগ তৈরি করে দিন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আদর, স্নেহ, ভালোবাসার পাশাপাশি শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলুন। এ পৃথিবীকে শিশুর নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তুলতে এবং জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব শিশুর ভেতর লুকায়িত পূর্ণ সম্ভাবনার উন্মেষ ঘটাতে আমরা সবাই মিলে একযোগে কাজ করে যাব।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
এমইউএম/এএটি