ফরিদপুর: পায়ের গ্যাংরিন রোগের চিকিৎসা নিতে একজন পল্লী চিকিৎসকের কাছে যান হতদরিদ্র শাহেব মোল্যা (৫১)। পরে রোগীর বাড়িতেই তারা পা কাটেন ওই পল্লী চিকিৎসক, আর এসময় তাকে চেপে ধরেন আরও ৪ জন।
এমনই এক লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলায়। পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে যাওয়াটাই যেন কাল হয়েছে পুড়াপাড়া ইউনিয়নের দুলালী গ্রামের হতদরিদ্র শাহেব মোল্যার। গ্যাংরিনে আক্রান্ত হওয়ায় প্রায় আড়াই বছর আগে চিকিৎসা নিতে যান গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের দুবলেশপুর এলাকার পল্লী চিকিৎসক রণজিৎ বিশ্বাসের কাছে। এরপর তিনি ৩০ হাজার টাকার চুক্তিতে শাহেব মোল্যার বাড়িতেই তার পা কাটেন, এসময় চেপে ধরেন ৪ জন। পা কাটার পর থেকেই শাহেব মোল্যার জীবনে শুরু হয় এক কালো অধ্যায়। পল্লী চিকিৎসকের হাতে এ ধরনের ঘটনায় সে সময় এলাকায় আলোচনার সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনার পর আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও কমছে না শাহেব মোল্যার পায়ের যন্ত্রণা। এই সময়ে ব্যাথানাশক ওষুধসহ বিভিন্ন ওষুধের খরচ বহন করে এখন সর্বস্বান্ত তিনি।
সম্প্রতি ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করলে চিকিৎসক তাকে জানিয়েছেন, আগের অপারেশন সফল হয়নি, তাই আবার করতে হবে।
জানা যায়, পল্লী চিকিৎসক রণজিৎ বিশ্বাস ফরিদপুরের নগরকান্দার পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার দুবলেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। এখন সেখানকার নামকরা ‘সার্জন’! হাত-পা কাটা, পাইলস্ সহ সব ধরনের অপারেশনই করেন।
সম্প্রতি রোগীর স্বজন পরিচয়ে এ প্রতিবেদক রণজিৎ বিশ্বাসের কাছে জানতে চান পাইলস্ অপারেশন করেন কি-না? এসময় তিনি বলেন, হ্যাঁ করি। এ অপারেশনে ৬/৭ হাজার টাকা লাগবে।
শাহেব মোল্যা অভিযোগ করেন, ‘দীর্ঘদিন হলো অপারেশন করিয়েছি, এখনও সুস্থ হতে পারিনি। ব্যাথার যন্ত্রণা আর সইতে পারছি না। প্রতিদিন ১৩০ টাকার ওষুধ লাগে, চাল কিনব, নাকি ওষুধ? আমার পায়ে তীব্র ব্যাথা অনুভব করছি, সহ্য করতে পারছি না। ডাক্তার বলছেন কাটা অংশে আবার অপারেশন করতে হবে; তা-না হলে এটি ঠিক হবে না। কিন্তু অপারেশন করানোর সামর্থ্য আমার নেই। আমি বাঁচতে চাই। আমার জন্য কিছু একটা করো, আমি আর সইতে পারছি না ব্যাথার যন্ত্রণা। আর ওই পল্লী ডাক্তারের বিচার চাই। যাতে কেউ যেন আর আমার মতো ভুক্তভোগী না হয়। '
এব্যাপারে পল্লী চিকিৎসক রণজিৎ বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বললে তিনি শাহেব মোল্যার পা কাটার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে বলেন, ‘সে (শাহেব মোল্যা) খুব গরীব মানুষ। টাকার অভাবে পায়ের গ্যাংরিন রোগের চিকিৎসা করাতে পারছিল না। পরে, আমার কাছে এলে তাকে ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে পা কেটে চিকিৎসা দেই। তবে, এ চিকিৎসায় ১০ হাজার টাকা আমাকে দিয়েছে সে। বাকি ৫ হাজার টাকা ও ওষুধের টাকা এখনও পাব। তার পায়ে কোনো ক্ষত নেই এখন। শুনেছি তার পায়ে নাকি একটু ব্যাথা করে। আমি তো সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি তাকে পুরোপুরি সুস্থ করতে। একটু আধটু সমস্যা থাকলে রোগীদের অভিযোগের সীমা থাকে না। ’
তিনি আরও বলেন, ছেলে-মেয়েরা চাকরি-বাকরি করে, তাই দুই বছর ধরে আর কোনো পল্লী চিকিৎসা করছি না।
এব্যাপারে নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস,এম ইফতেখার আজাদ বলেন, একজন পল্লী চিকিৎসক কোনো অবস্থাতেই এরকম অপারেশন করতে পারেন না। এটা আইনগতভাবে অপরাধ। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈনুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান। তাই, তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
আর ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব। এছাড়া ওই ভুক্তভোগী একটি লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
এমএমজেড