ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

৮ বছরেও মেলেনি সঞ্চয়ের টাকা, দিশেহারা ৩ শতাধিক পরিবার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩
৮ বছরেও মেলেনি সঞ্চয়ের টাকা, দিশেহারা ৩ শতাধিক পরিবার

ফেনী: ১৯৮৩ সাল থেকে শিক্ষকতা করেন মো. আলী হায়দার। ২০১৪ সালে সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের এলাহীগঞ্জ মমতাজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ থেকে অবসর নেন তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হয়েও গত প্রায় ৮ বছরে তার সঞ্চয়ের টাকা পাননি শিক্ষক সমিতির প্রবীণ এ নেতা।

চার বছর আগে অবসরে যান সোনাগাজীর আমিরবাদ বিসি লাহা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল খায়ের। গুরুতর অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী তিনি। শিক্ষক নেতাদের দ্বারস্থ হয়ে চাকরি জীবনের সঞ্চয়ের টাকা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তার পরিবারের সদস্যরা।

এই দুই শিক্ষক ও তাদের পরিবারের মতোই ফেনী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির তহবিলে সঞ্চয়ের অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত্যুবরণকারী তিন শতাধিক শিক্ষক।  

প্রায় ৮ বছর ধরে সমিতির নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এসব শিক্ষক ও তাদের পরিবার। তালিকায় রয়েছেন বহু সংখ্যক প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির প্রবীণ নেতারাও।

২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মারা যান লস্করহাট এসসি লাহা ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক মোহাম্মদ ইউছুফ। তার চিকিৎসা বাবদ পরিবারের খরচ হয়েছে ১২ লাখের বেশি টাকা।  

স্বজনরা জানিয়েছেন, তার চিকিৎসা করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে তার পরিবার। সমিতি অফিসে, নেতাদের দ্বারে মাসের পর মাস ঘুরেও তার কর্মজীবনের সঞ্চয়ের টাকা পায়নি পরিবার। কবে নাগাদ এই টাকা পাবেন, এ ব্যাপারেও সদুত্তর দিচ্ছেন না সমিতির কর্তাব্যক্তিরা।

পশ্চিম বিজয়সিংহ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুর নবী মজুমদার ২০২০ সালের ২১ জুন মারা যান। তার স্ত্রী মোর্শেদা আক্তার স্বামীর সঞ্চয়ের টাকা পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

ইউছুফ বা নুর নবী মজুমদারই নয়, ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত জেলার প্রায় সাড়ে ৩ শতাধিক শিক্ষক ও তাদের পরিবার সঞ্চয়ের টাকা পেতে অপেক্ষায় ক্ষণ গুনছেন। এসব শিক্ষকের অনেকেই অবসর সময় কাটাচ্ছেন। আবার অনেকের মৃত্যু হয়েছে। এসময়ে হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষক সমিতির ফান্ডে জমানো সঞ্চয়ের টাকা পেলেও ২০১৮ সালের পরে অবসর কিংবা মৃত্যুবরণকারীদের কেউই তা পাননি। ফলে ভুক্তভোগীরা সঞ্চয়ের টাকা পাওয়া নিয়ে হতাশায় ভুগছেন।

অপর একটি সূত্র জানায়, শিক্ষকদের অনেকে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি ছাড়াও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতিতেও সঞ্চয় করেন। ওইসব শিক্ষক দুটি ফান্ডের কোনোটিই পাননি।

ফেনী জেলা শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ও কালিদহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমিন জানান, অবসরপ্রাপ্ত, মৃত্যুবরণকারী শিক্ষকদের তালিকা করতে উপ-কমিটি গঠন করে দিয়েছি। অবসরপ্রাপ্তরা যেহেতু পেনশন পান না, সেহেতু তাদের প্রাপ্য টাকা পেলে তারা এসময়ে ভালো থাকতে পারবেন। অনেক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের চিকিৎসা ব্যয় চালাতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সমিতির সাধারণ সম্পাদক চেকে স্বাক্ষর না করায় শিক্ষকদের টাকা ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না।

ফেনী জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফকির আহম্মদ ফয়েজ বলেন, শিক্ষকদের টাকাগুলো ফেরত দিতে আমরা চেষ্টা করছি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিটিংয়ে এমনকি অফিসেও আসেন না। তার স্বাক্ষর ছাড়া ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। তার কারণে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও মৃত্যুবরণকারী শিক্ষকদের পরিবার ভোগান্তিতে আছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা লজ্জিত।

তিনি আরও বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর মোসাদ্দেক আলীর (সমিতির সাধারণ সম্পাদক) চাকরির মেয়াদ শেষ। এখন তাকে পাওয়া যাবে কিনা, সেটাও অনিশ্চিত। তাছাড়া সমিতির কিছু টাকা উত্তোলন করে তার কাছে রেখেছি। এই টাকার হিসাবও তিনি দেননি।

এ বিষয়ে ফেনী জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেক আলীর বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩
এসএইচডি/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।