বরগুনা: কোনো ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করে বরগুনার ইট ভাটাগুলোত জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এ সব কাঠ সামাজিক বনায়ন থেকে সংগ্রহ করে ভাটায় পোড়ানো হয়, যার ফলে পরিবেশ হুমকির মুখে পরেছে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সদ্য বিদায়ী তত্ত্বাবধায়ক ডা. সোহরাব হোসেন মুঠোফোনে বাংলানিউজকে বলেন, ইটভাটায় শিশুদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। একদিকে যেমন শ্বাসকষ্টে সমস্যা হয়, অন্যদিকে ফুসফুসের ও সমস্যা হয়। হাঁপানী, চোখ দিয়ে পানি জড়াসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা দেখা দেয়। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা স্থাপিত হলে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি থাকে।
স্থানীয় সামাজিক বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করে ভাটা অভ্যন্তরে কাঠের স্তুপ করে রাখা হয়। কাঠ চেরাইয়ের জন্য করাতকল স্থাপন রয়েছে। ইট পোড়ানোর জন্য ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়েক হাজার মণ কাঠের স্তুপ করে রাখা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্যমতে, বরগুনা জেলায় ৬৪টি ইট ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় ১২টি, আমতলীতে ২৪টি, বামনায় ৯টি, পাথরঘাটায় ৮টি, বেতাগীতে ৭টি ও তালতলীতে ৩টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে বরগুনা সদর, বেতাগী ও তালতলী উপজেলায় ১০টি ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেছে।
ইটভাটার শ্রমিকরা জানান, কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও কাঠ দিয়েই ইট পোড়ানোর প্রস্তুত চলছে। প্রতিটি ভাটায় দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ মণ জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হয়।
ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত আইন ২০১৩ ধারা ৬ বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসাবে কোনো জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করতে পারবেন না। যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ৬ লঙ্ঘন কর ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করেন, তাহলে ওই ব্যক্তিকে তিন বছর কারাদণ্ড অথবা তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।
বরগুনা পৌরসভার বাসিন্দা আ. রশিদ ফরাজী বাংলানিউজকে বলেন, বরগুনায় বেশ কিছু অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম।
সরেজমিনে দেখা গেছে বরগুনা সদর উপজেলার মেসাস সনি ব্রিকস, এসবিসি ব্রিকস, এসটিএফ-২ নামের তিনটি ভাটা ইট পোড়ানোর জন্য জ্বালানি হিসেবে কাঠ পুড়ছেন। ভাটার আশপাশের কাঠের স্তুপ করে রাখা হয়েছে।
এসটিএফ-২ ভাটা মালিক সুলতান আহম্মেদ বলেন, ফায়ারিংয়ের সময় কাঠ পুড়িয়েছি। এখন কয়লা দিয়ে ইট পোড়াচ্ছি। তবে তার ভাটার পাশে কাঠ স্তুপর করে রাখা হয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলায় বাইনচটকি এলাকার আরএসবি নামের দুই ভাটায় গিয়ে দেখা গেছে এ ভাটা দুটিতে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পুড়ছে। ভাটার দুইটির চারপাশে জ্বালানির জন্য কাঠের স্তুপ করে রাখা হয়েছে।
এছাড়া কাঠ চেরাইয়ে জন্য ভাটা ভেতরে করাতকল বসিয়ে সেখানে তিন জন শ্রমিক কাঠ চেরাইয়ের কাজ করছে। তাদের একজন বরগুনা রসদর উপজেলা বাসিন্দা আল-আমিন জানান আরএসবি নামের দুই ভাটায় জ্বালানি কাঠ চেরাই করা হচ্ছে।
আরএসবি ভাটায় মালিক আ. রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, আমার ভাটায় কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। ভাটা অভ্যান্তরে কাঠের স্তুপ ও করাতকল বসানোর বিষয় তিনি বলেন, কাঠ ও করাতকল আমার না।
বরগুনার আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নে এমএমএইচ ভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। সেখানে দেখা গেছে ট্রাফিতে করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঠ সংগ্রহ করে ভাটায় তোলার জন্য রাখা হয়েছে।
এছাড়া ভাটা অভ্যান্তরে কাঠ স্তুপ করে রাখা হয়েছে। ভাটাটি ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছেন হানিফ উল্লাহ নামের এক ব্যক্তি। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবসায় মন্দা, বেচা বিক্রি কম। কিছু কাঁচা মাল (ইট) আছে, কয়লার দাম বেশি, কাঁচা ইট গুলো কাঠ দিয়ে পুড়ে ভাটা বন্ধ করবো।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বরিশাল বিভাগী সমন্বয়কারী লিংকন বাইয়েন কোনো অবস্থায় ভাটার কাঠ পোড়ানো যাবে না। আমাদের দেশে বছরে অর্ধেক সময় ঝড়-বন্যা হয়ে থাকে। এসব থেকে বন আমাদের রক্ষা করে থাকে। এভাবে গাছ কাটা অব্যাহত থাকলে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, কোনো ইটভাটায় যদি ইট পোড়ানোর জন্য কাঠের ব্যবহার হয় তাহলে ভাটামালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্তা নেওয়া হবে। ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো আইনতো অপরাধ।
জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ইটভাটায় গুলোতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। কোনো ভাটায় কাঠ পোড়ানোর খবর পাওয়া মাত্রই আমরা সেখানে অভিযান চালাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৩
এসএম