লালমনিরহাট: ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়েও মেলেনি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে চাকরি। সেই টাকা ফেরত চাইতে গেলে উল্টো গাড়িচালকের মারধরের শিকার তিনি।
ভুক্তভোগীর নাম সিরাজ ইসলামের। তিনি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ব্যাংকান্দা গ্রামের মমিনুর ইসলামের ছেলে।
অভিযুক্ত গাড়িচালকের নাম আব্দুর রউফ। তিনি আদিতমারী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের গাড়িচালক পদে কর্মরত রয়েছেন। তিনি কুড়িগ্রামের বাসিন্দা।
সিরাজ ইসলামের অভিযোগ, গত ২০২০ সালে সিরাজ ইসলামকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িচালক পদে চাকরি দেওয়ার নামে ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা নেন আব্দুর রউফ। সে সময় পাটগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে ছিলেন আব্দুর রউফ। চালক হিসেবে লাইসেন্স ছিল না সিরাজের। ভাড়ি যান চালানার বৈধ লাইসেন্স পেতে সিরাজকে ফরিদপুরে নিয়ে যান রউফ। কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়াই লাইসেন্স পাইয়ে দেন। পরবর্তিতে নিজ গাড়িতেই সিরাজকে গাড়ি চালানো শেখান রউফ।
গাড়ি চালানো শিখিয়ে দিলেও সিরাজকে কাঙ্ক্ষিত চাকরি নিয়ে দিতে পারেননি আব্দুর রউফ। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ধরনা ধরেও সিরাজকে চাকরি নিয়ে দিতে পারেননি রউফ। অবশেষে সিরাজ টাকা ফেরত চাইলে টালবাহনা শুরু করেন রউফ।
হঠাৎ একদিন বদলি নিয়ে আদিতমারী চলে যান আব্দুর রউফ।
সিরাজ জানতে পারেন, শুধু তিনিই নন, অনেককে চাকরি নিয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছেন গাড়িচালক রউফ।
আদিতমারী ফায়ার স্টেশনে গিয়েও তার সাক্ষাৎ পাননি সিরাজসহ অন্যান্য চাকরি প্রত্যাশীরা। অফিসে থাকলেও রউফের সহকর্মীরা জানান তিনি অফিসে নেই। রউফের বাসায় গিয়েও গেট না খোলায় তার সাক্ষাৎ মেলেনি।
গত ১১ জানুয়ারি রউফের সঙ্গে দেখা করতে সকাল থেকে বিকেল অবধি আদিতমারী ফায়ার সার্ভিসের গেটেই বসেছিলেন সিরাজ ও তার ভগ্নিপতি আলামিন ইসলাম। এক পর্যয়ে বিকেলে অফিসের গেটেই রউফের দেখা পেয়ে যান তারা।
এ সময় চাকরির জন্য দেওয়া ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা ফেরত চাইলে তাদেরকে ছিনতাইকারী বলে চিৎকার দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন রউফ। পরে স্থানীয়রা এসে তাদের উদ্ধার করে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় বিচার চেয়ে ওই দিন রাতে আদিতমারী থানায় আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সিরাজ ইসলাম। অভিযোগের ২৪ দিনেও থানা পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী সিরাজের।
সিরাজ ইসলাম বলেন, আমাকে চাকরি পাইয়ে দেবেন বলে ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন রউফ। কিন্তু চাকরি তো দিলেনই না। টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে পিটুনি খেতে হয়েছে আমাদের। থানায় অভিযোগ দিলাম সেটারও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
অভিযুক্ত আদিতমারী ফায়ার সার্ভিসের গাড়িচালক আব্দুর রউফ বলেন, তাকে চাকরি নয়, লাইসেন্স পেতে সহায়তা করেছি। লাইসেন্স পেতে বিলম্ব হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের নিয়োগ পরীক্ষায় সিরাজ অংশ গ্রহণ করতে পারেননি। মূলত তাদের অত্যাচারে আমি পাটগ্রাম থেকে বদলি নিয়ে আদিতমারী এসেছি। এখানেও তারা অত্যাচার শুরু করেছে।
আদিতমারী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার (ভার) মনির উদ্দিন সরকার বলেন, রউফের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছেন। তবে ১১ জানুয়ারি অফিসে ছিলাম না তাই ওই দিনের ঘটনা আমার জানা নেই।
আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোক্তারুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি তদন্তনাধীন। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩
এসএএইচ