ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঢামেকে আগুন

ডায়ালাইসিসে ৩৪ রোগীকে রেখে বেরিয়ে যান নার্স-চিকিৎসকরা

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩
ডায়ালাইসিসে ৩৪ রোগীকে রেখে বেরিয়ে যান নার্স-চিকিৎসকরা

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনে রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) কিডনি রোগ বিভাগের ডায়ালাইসিস ইউনিটে ঢুকতেই হাতের ডানদিকে জানালায় থাকা এসির কম্প্রেসারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সে সময় তিনটি রুমে একযোগে ৩৪ জনের ডায়ালাসিস চলছিল।

আগুনের কারণে তাদের ডায়ালাইসিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে সেখানে থাকা স্বজনরা অভিযোগ করেছেন অগ্নিকাণ্ডের সময় রোগীদের ফেলে সব নার্স ও ডাক্তার বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

রোববার  বিকেল পৌনে তিনটার দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রচণ্ড ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় চারতলা। ডায়ালাইসিসে থাকা রোগীরা চিৎকার ও কান্নাকাটি করতে থাকেন।

অগ্নিকাণ্ডের সময় ডায়ালাইসিস ইউনিটের ঢুকতে হাতের দুই পাশে দুটি রুমে ১৪ জন ও বরাবর একটি বড় রুমে ২০ জনের একসঙ্গে ডায়ালাইসিস চলছিল। সেখানে দায়িত্বরত নার্সদের প্রধান ইয়াসমিন খানম জানান, হঠাৎ দেখি আমাদের প্রবেশ মুখে প্রচণ্ড ধোঁয়া। পরে বুঝতে পারলাম আগুন। ধোঁয়ায় পুরো ইউনিটি আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন ডায়লাইসিরের রোগীরাও কান্নাকাটি করতে থাকেন। কারণ তাদের ডায়ালাইসিস চলছিল। তারা সেটা বন্ধ করেও বের হতে পারবে না। এরই মধ্যে হাসপাতালের লোকজন অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। সে সময় চারিদিকে হাউমাউ চিৎকার ও কান্নার রোল পড়ে যায়।

তিনি আরও জানান, সকালের শিফটের পরপরই দ্বিতীয় শিফটের ডায়ালাইসিস শুরু করা হয়। একটা রোগীর ডায়ালাইসিসে ৪ ঘণ্টা করে সময় লাগে। আগুনের সময় আনুমানিক কোনো কোনো রোগীর দেড় ঘণ্টা, আবার কোনো রোগীর দুই ঘণ্টা ডায়ালাইসিস সম্পন্ন হয়েছিল।

তবে, তিনি দাবি করেন, ঘটনার সময় নার্স-ডাক্তাররা উপস্থিত ছিলেন। কেউ রোগীদের ফেলে বের হয়ে যায়নি।

এদিকে ঘটনার সময় ডায়ালইসিসে থাকা আরিফ হোসেনের (৪০) স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, আগুনের পরপরই পুরো ইউনিট ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। এটি দেখেই নার্সরা বাইরে চলে যান। রোগীদের বের করার মতো কেউ ছিল না। কিছুক্ষণ পর একেএকে সবাই আবার ফিরে আসেন।

কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে আসা ডায়লাইসিসের রোগী আবুল হোসেনের (৫৫) ছেলে জিহাদ হোসেনও একই কথা জানান। তিনি বলেন, ধোঁয়া ওয়ার্ড ও চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সরা প্রথমে ছোটাছুটি করে বাইরে বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর তারা আবার ফিরে আসেন।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই হাসপাতালে থাকা অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র দিয়ে আমাদের লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলে। প্রচণ্ড ধোঁয়া ছিল, তা উপেক্ষা করে মুখে কাপড় বেঁধে আগুন নিভিয়ে ফেলেন তারা। সঙ্গে আনসার সদস্যরা ও নতুন ভবনের ওয়ার্ড মাস্টারসহ আরও অনেকে ছিলেন।

তিনি বলেন আগুন লাগার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘটনাস্থলে যাই। সঙ্গে অন্যান্য কর্মকর্তারাও ছিলেন। ফায়ার সার্ভিস এসে পৌঁছানোর আগেই আমাদের লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলে।

তিনি আরও বলেন, ডায়ালাইসিসে থাকা রোগীদের সঙ্গে আমরা সেখানে অবস্থান করি। ডাক্তার-নার্সরাও ছিলেন। তখনো প্রচণ্ড ধোঁয়া ছিল। নির্দেশ দেওয়া হয়, যতটা সম্ভব ডায়ালাইসিস যাদের শেষ করা যায়, তাদের দ্রুত শেষ করা হোক। মোটামুটি সবারই চিকিৎসা সম্পন্ন হয়েছে।   এরপরই রোগীদের সেখান থেকে বের করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, কম্প্রেসারের নিচে পুরাতন কাপড়ের স্তূপ ছিল- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিনই হাসপাতালে ময়লা পরিষ্কার করা হয়।   আসলে আগুন কীভাবে লেগেছে এটা তদন্ত সাপেক্ষে ফায়ার সার্ভিস বলতে পারবে। আমাদের হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার চাইতে দুইগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকে। হাসপাতালে তিনটি ভবনের মধ্যে নতুন ভবনেই আছে দেড় হাজার মতো রোগী। অথচ জনবল আছে এর তুলনায় কিছুই না।

তিনি আরও জানান, প্রতিদিনই আমাদের লোকজন ময়লা পরিষ্কার করে এবং বাইরে থেকেও টাকা খরচ করে লোক এনেও পরিষ্কার করানো হয়। আগুন নেভানোর পর সেই স্থান পরিষ্কার করা হচ্ছে। দ্রুত সেখানে রোগীদের চিকিৎসা আবার শুরু করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩
এজেডএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।