জামালপুর: চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন জামালপুরের বাঘ খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক মুন্সী বীরপ্রতীকবার (৭৫)।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান তিনি।
মৃত্যু কালে তিন ছেলে, তিন মেয়ে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক মুন্সী জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বাট্টাজোর ইউনিয়নে চন্দ্রবাজ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিবর্তি সময়ে তিনি পাশ্ববর্তী শেরপুর জেলার শ্রীবরদী শহরে স্বপরিবারের বসবাস করতেন।
জহুরুল হক মুন্সীর সবচেয়ে বীরোচিত অবদান হচ্ছে, ৯ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ নিজের প্রাণ সংকটাপন্ন করে জামালপুরে অবস্থিত তৎকালীন পাকিস্তানি গ্যারিসনে ৩১ বেলুচের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল সুলতান মাহমুদের কাছে আত্মসমর্পণের আহ্বান সম্বলিত চিঠি নিয়ে স্বশরীরে হাজির হওয়া এবং চিঠির উত্তরসহ জীবিত অবস্থায় আবার ফিরে আসা।
কৃষকের বেশে সাইকেলসহ সাদা পতাকা উড়িয়ে নিরস্ত্র কমান্ডার মুন্সী ১৫০০ সশস্ত্র পাকিস্তানি সৈন্যের ক্যাম্পে গিয়ে চিঠি পৌঁছে দেন। চিঠি পড়ে গ্যারিসন প্রধান পাকিস্তানি লে. কর্নেল সুলতান ক্রুদ্ধ হয়ে এসএমজির আঘাতে মুন্সির সামনের মাড়ির কয়েকটি দাত ভেঙ্গে ফেলেন। ক্রমাগত নির্যাতনের মুখে কমান্ডার মুন্সি আশ্রয় নেন কৌশলের।
ভাঙ্গা ভাঙ্গা উর্দুতে বলেন, তিনি সাধারণ দরিদ্র কৃষক। ভারতীয় সৈন্যরা তাকে বাধ্য করেছে এখানে আসতে। তিনি রাজি না হলে তাকে মেরে ফেলা হত এ কারণে তিনি এখানে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি জানেন না এ চিঠিতে কি লেখা আছে। তার এ কথায় কাজ হয়। নির্যাতনও বন্ধ হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এরপর কমান্ডার মুন্সিকে এক কাপ চা খাইয়ে ফিরতি চিঠিসহ ছেড়ে দেওয়া হয়।
জামায়েত নেতা কামরুজ্জামানের মামলার অন্যতম স্বাক্ষীও ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক মুন্সী বীরপ্রতীকবার।
সরকার কোনো যোদ্ধাকে যুদ্ধে বীরত্বের স্বীকৃতির জন্য একই পদক দুইবার প্রদান করলে তার নামের শেষে ‘বীরত্ব’ উপাধি লেখার পর প্রথম ব্রাকেটে ‘বার’ লেখার নিয়ম স্বীকৃত। ১৯৭১-এ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ‘জহুরুল হক মুন্সী’ই একমাত্র এই বিরল উপাধি পাওয়া বীরপুত্র!
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২৩
এসএম