ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এক বছরেও চালু হয়নি ১৬ কোটি টাকার আধুনিক বর্জ্য শোধনাগার

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
এক বছরেও চালু হয়নি ১৬ কোটি টাকার আধুনিক বর্জ্য শোধনাগার ময়লার ভাগাড়

বরগুনা: উদ্বোধনের পর এক বছর পার হলেও চালু হয়নি ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বরগুনা পৌর শহরের বর্জ্য শোধনাগার। এ কারণে এখনো পৌর শহরের সোনাখালীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ফেলা হচ্ছে পুরো শহরের বর্জ্য।

যা দূষিত করছে আশপাশের পরিবেশ। যার আনুমানিক পরিমাণ ৮ থেকে ১০ টন।

স্থানীয়রা বলছেন সোনাখালীর ভাগাড়ের ৫০ গজের কম দূরত্বে রয়েছে ১০টি পরিবার। মশা মাছির উপদ্রবের পাশাপাশি ময়লা পোড়ানো ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে ভুগছেন শিশু বৃদ্ধসহ সবাই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন হাসপাতাল বর্জ্য ও সাধারণ বর্জ্যের সংমিশ্রনে হুমকিতে পড়েছে মানুষের জীবন।  

বরগুনা পৌর শহরের সব ময়লা ফেলা হয় সোনাখালীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। প্রতিরাতে ময়লার এ ভাগাড়ে আগুন জালিয়ে দেয় পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। সেই আগুন জ্বলতে থাকে দিনভর। ময়লা-আবর্জনা ও পলিথিনসহ প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়া ধোঁয়া ও গন্ধে দুর্বিষহ দিন কাটছে এখানকার মানুষের।

স্থানীয় বাসিন্দা রিপন বলেন, শুনেছি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করা হয়েছে বরগুনা সদর ইউনিয়নের হেলিবুনিয়া গ্রামে। বরগুনা পৌর শহরের সব বর্জ্য সোনাখালী এলাকায় খোলা স্থানে ফেলে রাখে পৌর কর্তৃপক্ষ। আবাসিক এলাকা, গ্রাম ও জনবসতিপূর্ণ স্থানে পৌরসভার ময়লার ভাগাড় করার কোনো বিধান না থাকলেও এটি করা হয়েছে এবং তা টিকে আছে। এই বর্জ্যের দুর্গন্ধে এই এলাকায় বসবাস করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা এই দুর্গন্ধের মধ্যেই থাকতে হয় আমাদের। পৌর শহরের বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করা হয়েছে ১৬ কোটি টাকা ব্যয় করে। কিন্তু সেটির ব্যবহার করছে না পৌর কর্তৃপক্ষ।  

ময়লার স্তূপের একদম সামনেই সাবিনা ইয়াসমিনের বসতঘর। সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ২০ বছর ধরে তার বাসার সামনে ময়লা ফেলতে ফেলতে এখন বিশাল স্তূপ হয়ে গেছে। এখনো প্রতি রাতে ট্রাকে করে ময়লা ফেলা হয় এই স্তূপের ওপর। সেই ময়লা ভোর পর্যন্ত উপচে রাস্তার চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তখন আবার বেড়ে যায় দুর্গন্ধের মাত্রা। সকাল থেকে দুপুর- পুরো সময় জুড়েই নাক ঢেকে চলাচল করতে হয় স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতগামী পৌরবাসীকে।  

পুরো শহরের ময়লা ফেলানোর পরে এখানে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্যে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এসময় শ্বাস নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হয়। একদিকে ময়লার দুর্গন্ধ অন্যদিকে প্লাস্টিক আর পলিথিন পোড়া গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। পৌরসভাগামী লাখো মানুষ ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি স্কুল কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী প্রতিদিন এই পথে যাতায়াত করে।

তিনি আরও বলেন, গত পৌরসভা নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী কামরুল আহসান মহারাজ আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি নির্বাচিত হলে এখান থেকে ময়লা সরিয়ে নেবেন। এজন্য আমরা তাকে ভোট দিয়েছি। তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের দুই বছর অতিবাহিত হলেও তার দেওয়া কথা তিনি রাখেননি। রাস্তার পাশে খোলা স্থানে ময়লা ফেলার কারণে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা।

রহিমা বেগম বলেন, ২০ বছর ধরে ময়লা ফেলে বিশাল স্তূপ হয়ে গেছে। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ টন ময়লা আবর্জনা ভাগাড়ে ফেলা হচ্ছে। অথচ প্রতিবার নির্বাচনের আগে মেয়র প্রার্থীরা বিজয়ী হলে এখান থেকে বর্জ্যের স্তূপ সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে আশ্বাস শুধুমাত্র আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থাকে।

কথা হয় স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলেন, আবর্জনার উভয় পাশে অন্তত ১ কিলোমিটার এলাকায় সারাক্ষণ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এসব এলাকার ছেলে-মেয়েদের অন্য এলাকা থেকে এসে কেউ বিয়ে করতে চায় না। পুরো এলাকা জুড়ে দুর্গন্ধ। মেয়েরা বড় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিয়ে দিতে পারছে না পরিবার।

স্থানীয়রা আরও জানান, দুর্গন্ধ কমাতে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হয়। এরপরেও মশা মাছি ঘরে ঢুকে যায়। প্রতিদিন তাদের ভাত খেতে হয় মশারি টাঙিয়ে। এই এলাকার মানুষ বাজারে গেলে গায়ের দুর্গন্ধ এতটাই তীব্র থাকে যে অপরিচিত লোকজনও বুঝতে পারে আমাদের বাড়ি সোনাখালী। ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধের কারণে মশা মাছিতে বার মাস অতিষ্ঠ থাকতে হয় তাদের।

বেশ কয়েকজন পথচারীর সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, ২০ বছরেও হয়নি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্রবেশ দ্বারেই ময়লার স্তূপ। এই রাস্তাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সদর উপজেলার ৬ নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের বাজারে আসতে এই রাস্তা সহজ পথ। কিন্তু ময়লার দুর্গন্ধে এই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করা কষ্টকর।  

এই পথ দিয়ে চলাচল করা স্কুল শিক্ষার্থী ফারজানা, মাহবুবা, হাসি, রাইয়ান, মনসুর জানায়, শহরে বের হলেই দেখা মিলবে যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়। নাকে ভেসে আসে দুর্গন্ধ। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। প্রতিদিন এই পথ ধরে স্কুলে আসা যাওয়া করতে হয় তাদের। ময়লার দুর্গন্ধ আর প্লাস্টিক পোড়া গন্ধে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তাদের।

বরগুনা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের যারা পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে তারা দিনরাত কাজ করছে।

এ ব্যাপারে বরগুনার সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. ফজলুল হক বলেন, অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে ইতোমধ্যে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এভাবে খোলা স্থান তো ময়লার ভাগাড় হতে পারে না। খোলা স্থানে হাসপাতালের ও সাধারণ বর্জ্যের সংমিশ্রণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে স্থানীয়রা। তাই খোলা স্থান থেকে ময়লা সরিয়ে নিয়ে হাসপাতাল বর্জ্য ও সাধারণ বর্জ্য আলাদাভাবে রিসাইক্লিং করতে হবে। নাহলে দুটি বর্জ্য মিলে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়ে মানুষের শরীরে মারাত্মক ক্ষতি করবে।  

তবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনা আছে। অভিজ্ঞ লোকবল না থাকায় বজ্র শোধনাগারের ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে জানান পৌর মেয়র অ্যাড. কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, শিগগিরই লোকবল নিয়োগ দিয়ে হেউলিবুনিয়া এলাকার জনশূন্য এলাকায় নির্মিত শোধনাগারটি চালু করা হবে।  

এক বছর আগে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর শহরের বাইরে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে। কাজ শেষে শোধনাগার উদ্বোধন ও করা হয়েছিল। যা এখন পড়ে আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।