বরিশাল: প্রায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কের নিরাপত্তায় লক্কর-ঝক্কর মার্কা দুটি পিকআপ ভ্যান দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে মস্তফাপুর (ক্যাম্প) ও গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশ। তাও আবার গাড়ি দুটি ৪০ এর ওপরে গতিসীমা ওঠাতেই সক্ষম নয়, যেখানে এ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সর্বোচ্চ ৬০-৯০ কিলোমিটার গতিতেও যানবাহন চলাচলের নির্দেশনা রয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগেরই।
আবার মস্তফাপুর (ক্যাম্প) ও গৌরনদী হাইওয়ে থানার নিজেদের কোনো রেকার না থাকায় ৬০ কিলোমিটার এ মহাসড়কে যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়লে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উদ্ধারকাজ চালাতে হয় ধার করে।
আর তাই দক্ষিণের সাত জেলায় চলাচলকারী যানবাহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কটিতে নজরদারি বাড়াতে হাইওয়ে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করার দাবি সুশীল সমাজের।
বাংলাদেশ ইয়ুথ পার্লামেন্টের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। সড়ক প্রশস্ত না হওয়ায় বেশি গতিতে যানবাহন চালাতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। আর দুর্ঘটনাসহ মহাসড়কে অপরাধ রোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে। আর যে হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে তাদের জনবল ও সরঞ্জামের সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিতে হবে।
বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর রিজিয়নের আওতাধীন মস্তফাপুর হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্প ও গৌরনদী হাইওয়ে থানা মাদারীপুরের টেকেরহাট থেকে বরিশালের নতুনহাট পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার মহাসড়কের দায়িত্ব পালন করছে। এরমধ্যে মস্তফাপুর হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্প টেকেরহাট ব্রিজ থেকে ভুরঘাটা ব্রিজের আগ পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটর এবং গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশ ভূরঘাটা ব্রিজ থেকে বরিশালের বাবুগঞ্জের নতুনহাট পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার মহাসড়কে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তবে এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের এ দুটি স্টেশনে পূরাতন মাত্র দুটি পিকআপ আর হাতে গোনা কয়েকটি পুরাতন মোটরসাইকেল রয়েছে। আর থানা ও ক্যাম্প কারও অধীনে নেই মহাসড়ক থেকে বিকল ও দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন সরানোর কাজে ব্যবহৃত রেকার।
পুলিশ সদস্যরা বলছেন, পুরাতন এ যানবাহনের কারণে মহাসড়কে কৌশল অবলম্বন করে অধিক ও বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হয় তাদের। তবে সেই কৌশল কেউ অমান্য করলে ধাওয়া দিয়ে তাদের ধরে আইনের আওতায় আনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আর সম্ভব হয় না। আবার এ যানবাহনের কারণে তাৎক্ষণিক খবর পেলেও দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে তাদের। ফলে উদ্ধারকাজেও দেরি হচ্ছে। আবার নিজেদের অধীনে রেকার না থাকায় সড়কের ওপর আটকেপড়া যানবাহন সরিয়ে নিতেও সময় ব্যয় করতে হয়।
গৌরনদী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপ-পরিদর্শক (এসআই) তমাল সরকার জানান, তাদের একটি পিকআপ ভ্যান ও দুটি মোটরসাইকেল রয়েছে। তবে কোনো রেকার নেই। আর যে পিকআপটি রয়েছে সেটিও খুব পুরাতন। যাতে ৪০ কিলোমিটারের ওপর গতি ওঠানো যায় না। এর বেশি গতি ওঠালে গাড়িটি যেমন কাপে তেমনি ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে এর ওপর চাপ দেওয়া যায় না।
আর মস্তফাপুর হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) গোলাম রসুল মোল্লা জানান, তাদেরও কোনো রেকার নেই। তবে রয়েছে পুরাতন একটি পিকআপ ও একটি মোটরসাইকেল। পিকআপটি পুরাতন হওয়ায় তার ওপর বেশি চাপ দেওয়া যায় না।
নিজেদের সক্ষমতা কম হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে হাইওয়ে মাদারীপুর জোনের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম বলেন, জনবলের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশের যানবাহন সংকট রয়েছে। তবে তাই দিয়েই আমরা মহাসড়কের নিয়ম ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। আইন মানাতে বিগত দিনের থেকে বর্তমানে মাদারীপুর জোনের আওতায় সড়ক আইনে প্রচুর মামলা হয়েছে এবং হচ্ছে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের চাপ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ভবিষ্যতে সড়কের সক্ষমতার পাশাপাশি আমাদের কাজের পরিধিও বাড়বে। সেই চিন্তা করে বরিশাল ও পটুয়াখালীর যে অংশে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই সেসব মহাসড়ক মিলিয়ে আরও দুই থেকে তিনটি হাইওয়ে থানা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর বর্তমানে জোনের আওতায় থাকা রেকারের পাশাপাশি জেলা পুলিশের রেকার ব্যবহার করে সমন্বয় ঘটিয়ে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে বিকল ও দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩
এমএস/আরবি