ঢাকা: ২০০৪ সালে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন মো. পলাশ শেখ (৩৮)। জীবিকার তাগিদে ২০১৩ সালে চাকরির জন্য ঢাকায় আসে এবং একটি স্বনামধন্য সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি শুরু করেন।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের হোতা মো. পলাশ শেখসহ ৬ জনকে আটক করেছে র্যাব-২।
চক্রের বাকি সদস্যরা হলেন- মো. মনোয়ার হোসেন (৩২), রশিদুল ইসলাম (৪০), নাজীম মোল্লা (৩৫), মারুফ হোসেন (২৪) ও মো. নাইমুল ইসলাম (২২)।
অভিযানে তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ওয়ান শুটার গান, ৭টি একনালা বন্দুক, দুটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ৮ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ওয়ান শুটারের গুলি ২ রাউন্ড, একনলা বন্দুকের গুলি ৬৭ রাউন্ড, ০.২২ বোর রাইফেলের গুলি ৪০ রাউন্ড, ১১টি জাল লাইসেন্স ও ১৯টি বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার নামের সিল উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, চক্রটি অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান করত। পরবর্তীতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অভিনব কৌশলে ভুয়া ও জাল লাইসেন্স তৈরির মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র বিক্রির জন্য বেসরকারি বিভিন্ন স্বনামধন্য নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা সংক্রান্ত চাকরি প্রদানে আকৃষ্ট করে আগ্রহীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতো। চক্রটির হোতা পলাশ। চক্রের সদস্য সংখ্যা ৪-৫ জন।
চক্রটি চাকরি প্রদানের জন্য জনপ্রতি ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। অবৈধ অস্ত্র ও ভুয়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিকিরিউটি গার্ড হিসেবে চাকরি করতো। এছাড়াও চক্রটি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে চড়া দামে জাল লাইসেন্স তৈরি করে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করতো বলে জানান ওই র্যাব কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, আটক মনোয়ার স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ২০১৪ সালে চাকরির জন্য ঢাকায় এসে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি শুরু করেন। চাকরির সুবাদে পলাশের সঙ্গে তার সু-সর্ম্পক গড়ে উঠে এবং পলাশের সহযোগিতায় দুই লাখ টাকার বিনিময়ে তিনি একটি ভুয়া লাইসেন্সকৃত অবৈধ একনলা বন্দুক সংগ্রহ করে একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অধিক বেতনে চাকরি শুরু করেন। পরবর্তীতে পলাশ তাকে বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে অবৈধ অস্ত্র কেনাবেচার জগতে প্রবেশ করায়। পলাশের নির্দেশনায় মনোয়ার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করতো ও ভুয়া লাইসেন্স তৈরির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অস্ত্র বিক্রি করতেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আটক রশিদুল স্থানীয় একটি মাদরাসায় দাখিল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ২০১৯ সালে চাকরির জন্য ঢাকায় আসেন তিনি। চাকরির সুবাদে পলাশের সঙ্গে তার সু-সর্ম্পক গড়ে উঠে এবং দুই লাখ টাকার বিনিময়ে সে ভুয়া লাইসেন্সকৃত অবৈধ অস্ত্র কিনে করে বেশি বেতনে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করত। তিনি বিভিন্ন সময়ে আগ্রহী চাকরি প্রার্থীদের পলাশের কাছে পাঠাতেন।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, আটক নাইমুল ইসলাম স্থানীয় একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে করেন। তিনি ২০২০ সালে চাকরির সন্ধানে ঢাকায় আসেন। পরবর্তীতে পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে পলাশের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পলাশের লোভনীয় বেতনের প্রস্তাবে আকৃষ্ট হয়ে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে ভুয়া লাইসেন্সকৃত অস্ত্র কিনে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বেশি বেতনে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করত। তিনি বিভিন্ন সময়ে আগ্রহী চাকরি প্রার্থীদের পলাশের কাছে পাঠাতেন।
আটক নাজিম মোল্লা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পযর্ন্ত পড়াশোনা করেন। ২০২২ সালে চাকরির জন্য ঢাকায় এসে এবং পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে তার পলাশের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পরবর্তীতে সে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে ভুয়া লাইসেন্সকৃত অবৈধ অস্ত্র কিনে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করতেন। বিভিন্ন আগ্রহী চাকরি প্রার্থীদের তিনি পলাশের কাছে পাঠাতেন।
আটক মারুফ স্থানীয় একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ২০২৩ সালে চাকরির জন্য ঢাকায় আসেন। পরবর্তীতে তিনি পলাশের মাধ্যমে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ভুয়া লাইসেন্সকৃত অস্ত্র কিনে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি শুরু করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
এসজেএ/জেএইচ