ঢাকা: গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মিথ্যা পরিচয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে সখ্যতা গড়ে তুলতেন। এরপর ওই ব্যক্তির এলাকায় ঘুরতে গিয়ে বলতেন বিশেষ অভিযানে সেখানে গেছেন।
এমনকি স্থানীয় থানা পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও ভুয়া পরিচয় দিয়ে দ্বিধায় ফেলে দিতেন। টার্গেট এলাকায় ২-১ দিন ঘুরে বাড়ি-ঘর রেকি করতেন। এরপর এক রাতে সেসব বাড়িতে অভিযান চালানোর নামে সর্বস্ব লুট করে নিতেন।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি আব্দুল কুদ্দুস ওরফে ডলার নাহিদ (৩০) নামে এই প্রতারকের। সুনামগঞ্জ সদরের নারায়নতলা গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে অভিযানের নামে লুট ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৪।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয়পত্র এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরা ছবি জব্দ করা হয়।
র্যাব জানায়, ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা নাহিদ ২০১৬ সালে ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নেন। সেই সুবাদে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের কাছ থেকে বাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারেন। এসব ভালোভাবে রপ্ত করে গত ৫-৬ বছর ধরে নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বাহিনীর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
ঘটনার বিবরণে তিনি জানান, গত ২৫ জানুয়ারি রাতে সুনামগঞ্জের নারায়নতলা গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মিথ্যা পরিচয় দিয়ে তল্লাশির নামে লুটপাট এবং শ্লীলতাহানি করে নাহিদ ওতার সঙ্গীরা। ঘটনা বুঝতে পেরে এ সময় এলাকাবাসী তাদেরকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। কিন্তু কৌশলে মূলহোতা নাহিদ ও স্থানীয় বাসিন্দা বিজন রায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
এ ঘটনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোকসেদ আলী বাদি হয়ে সুনামগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা করেন। যেহেতু স্থানীয়রা বিজনকে চিনতে পারেন, সেহেতু মামলায় তার নাম উল্লেখ করা হয়।
এর ভিত্তিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এজাহারনামীয় আসামি বিজন রায়কে মিরপুর মডেল থানা এলাকা থেকে আটক করে র্যাব-৪। বিজনকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে লুটপাট ও চাঁদাবাজির মূলহোতা আব্দুল কুদ্দুস ওরফে ডলার নাহিদকে আটক করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদ জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে মানুষের কাছে নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিতেন। ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা নাহিদের ২০০৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও কৌশলে ১৯৯৬ সালের এসএসসি ব্যাচের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়ে নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন।
গত চার-পাঁচ মাস আগে ফেসবুকে বিজনের সঙ্গে নাহিদের পরিচয় হয়। সখ্যতার সুবাদে একপর্যায়ে বিজনের বাড়ি সুনামগঞ্জে যান নাহিদ। বিজন সুনামগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তদের সঙ্গে তার সু-সম্পর্ক ছিল। পরে নাহিদ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থা পরিচয় দিয়ে বিশেষ অভিযানের কথা জানান এবং তাদের সহায়তা চান।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, নাহিদ সে সময় বিজন ও অন্যান্য সহযোগীদের সমন্বয়ে সুনামগঞ্জের সদর থানার নারায়নতলা এলাকা রেকি করে ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় নাহিদ নিজেই স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ের কথা জানিয়ে তাদের ঘটনাস্থলে আসতে বলেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোকসেদ আলীর বাড়ীসহ আশপাশের বাড়িতে তল্লাশির নামে লুট এবং শ্লীলতাহানি করেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়রা তাদের আটক করে পুলিশে খবর দেয়। কিন্তু নিজেকে গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তার মিথ্যা পরিচয় দিয়ে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যান নাহিদ ও বিজন।
নাহিদ গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে ঢাকা ও পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গোয়েন্দা সংস্থার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মিথ্যা পরিচয় দিয়ে অভিযানের নামে বিভিন্ন বাড়ি থেকে নগদ অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করেছেন বলে ও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩
পিএম/এমএমজেড