ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

রমজানে ১ কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে: প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩
রমজানে ১ কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে: প্রধানমন্ত্রী কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা: আসন্ন রমজানে প্রায় এক কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন ও ‘বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তিকেন্দ্র’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রমজানের সময় আমরা প্রায় এক কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেবো, সেই সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। যাতে দেশের মানুষের কখনো খাদ্যে কষ্ট না পায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ’

দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের বিভিন্ন সহায়তা কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আপনারা জানেন আমাদের দেশে যারা হতদরিদ্র তাদেরকে আমরা প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল দিচ্ছি। এই চালের সঙ্গে আমরা পুষ্টি চালও মিশিয়ে দিচ্ছি যাতে তাদের পুষ্টিহীনতা না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সময়ে আমরা নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশনের ফলে বিশ্বব্যাপী যখন মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে আমরা আমাদের দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রায় এক কোটি মানুষকে ৩০ টাকা কেজিতে চাল দিতে টিসিবি কার্ড বিতরণ করেছি। তার থেকেও যারা নিম্নবিত্ত, তারা ১৫ টাকায করে কেজিতে চাল নিতে পারবে আমরা সেই ব্যবস্থা প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জন্য করেছি। ’

নিজে ফসল ফলানো গর্বের

স্কুল জীবন থেকে শিক্ষার্থীদের কৃষি কাজে সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষিতে আমাদের যুব সমাজকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করা দরকার। আমার মনে হয় স্কুলজীবন থেকেই সম্পৃক্ত করা দরকার। মাঠে কাজ করা, ফসল ফলানো এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, লজ্জার বিষয় না। কাজেই সেভাবেই আমাদের দেশের মানুষকে গড়ে তুলতে হবে। ’

কৃষি নিয়ে শিক্ষিত যুবকদের মানসিকতা বদলেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমি সত্যি খুব আনন্দিত। অনেক ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখে মাঠে যেতে চায় না, এমনও ছিল যে, বাবা কৃষক সেটা বলতেও লজ্জা পেতো। আজকে কিন্তু সেই লজ্জাটা আর নাই, সেই লজ্জাটা আমরা ভেঙে দিয়েছি। ’

তিনি বলেন, ‘যেটা খেয়ে আমাদের জীবন বাঁচে, সেই কাজ করাটা লজ্জার না। সেই কাজ করাটা গর্বের। কাজেই মানসিকতার পরিবর্তন করা একান্ত প্রয়োজন। সেটাও আজকে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি। ’

(প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও তার সরকারি বাসভবন গণভবনে বিভিন্ন প্রজাতির ধান, সরিষা, মধু, প্রায় সব ধরনের শাক-সবজি, ফলমূল, হাঁস-মুরগি, কবুতর, গরু, মাছ চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। )

গণভবনে শেখ হাসিনার ফসলি উঠোন, শুধু পেঁয়াজই ১০০ মণ!

আরও গবেষণা বাড়াতে হবে

কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সব সময় মনে করি গবেষণা ছাড়া কখনো উৎকর্ষ সাধন করা যায় না। আর যেহেতু কৃষিনির্ভর দেশ, আমরা গবেষণার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি আমরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান সেগুলো গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। ’

তিনি বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সব সময় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আঘাত আমাদের ওপর আসে। সেজন্য গবেষণা সবসময় অব্যাহত রাখতে হবে এবং এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ফসল উৎপাদন করতে হবে। শুধু ধান উৎপাদন নয়, ধানের সঙ্গে আমাদের তরকারি, ফলমূল সবকিছু উৎপাদনে বাংলাদেশ একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ’

কৃষি যান্ত্রিকীকরণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণের কথা স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সব সময় বলে গেছেন এবং ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। আজকে আমরা সে ব্যাপারে যথেষ্ট এগিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা যান্ত্রিকীকরণের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিচ্ছি, ভর্তুকি দিচ্ছি, উপকূল অঞ্চলে প্রায় ৭০ শতাংশ আমরা ভর্তুকি দিই এবং অন্যান্য অঞ্চলে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি। ’

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। সেজন্য দক্ষ মানবশক্তি তৈরি করতে আমরা ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছি। বিশ্বে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হচ্ছে, আমাদেরও সেসঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। ’

এর আগে গাজীপুরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে ‌‘বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষিপ্রযুক্তি কেন্দ্র’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনের পর তিনি বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষিপ্রযুক্তি কেন্দ্রের বিভিন্ন উদ্ভাবন ঘুরে ঘুরে দেখেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্স ইনস্টিটিউটের (আইআরআরআই) মহাপরিচালক জেইন বালিই, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কানাডার গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব ফুড সিকিউরিটির (সিইইউ) নির্বাহী পরিচালক ড. স্টেভিন ওয়েব, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবির।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩
এমইউএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।