ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর দেওয়া বক্তব্য সমীচীন নয়: হাইকোর্ট 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩
নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর দেওয়া বক্তব্য সমীচীন নয়: হাইকোর্ট  ফাইল ফটো

ঢাকা: দুই ছেলের বিরুদ্ধে মামলার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নিয়ে চট্টগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর দেওয়া বক্তব্যকে সমীচীন নয় বলে মনে করেছেন হাইকোর্ট।  

একটি জাতীয় দৈনিকে 'চামড়া সব ছিঁড়ে ফেলব, গায়ে হাত মাইজভান্ডারীর’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনার পর বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ মন্তব্য করেন।

আদালত বলেছেন, আমরা সবাই কেমন যেন অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছি। সিভিল সোসাইটির একজন মানুষ, ভালোভাবে বলতে পারতেন। তার মন্তব্য আরও সুন্দর হওয়া উচিত ছিল।

প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

তিনি বলেন, ওই বক্তব্য একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাত। সাংবিধানিক পদে থেকে একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে এভাবে বক্তব্য দিলে আমরা কোথায় যাব?

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, তিনি একজন সংসদ সদস্য। দুদকের মামলা নিয়ে কোনো কারণে সংক্ষুব্ধ হলে তিনি উপযুক্ত আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন। তা না করে জনসম্মুখে এভাবে বলতে পারেন না। তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া যেতে পারে।

তখন আদালত বলেন, মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে। আপনারা আপনাদের কাজ করেন।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কমিশন ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমোদন দেয়।

এরপর রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন কমিশনের সহকারী পরিচালক পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম।

মামলার আসামিরা হলেন- এমপি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর ছেলে সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারী, সৈয়দ আফতাবুল বশর মাইজভান্ডারী, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান কে এম খালেদ, তার ছেলে কে এম রাকিব হোসেন এবং আত্মীয় খন্দকার মো. মোস্তাহিদ, বর্তমান পরিচালক মুসলিমা শিরিন, জেড এম কায়সার, মো. অলিউজ্জামান, এম শাহাদত হোসেন কিরন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট গুলশান আরা হাফিজ ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট তাজরিয়ান হক, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদ খান, সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আহসান কবির খান ও সাবেক এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. রেজাউল হক।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

গত সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে মাইজভান্ডারী শাহি ময়দানে সৈয়দ শফিউল বশর মাইজভান্ডারীর ১০৪তম খোশরোজ শরিফ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তরীকত ফেডারেশনের নেতা নজিবুল বশর বক্তব্য দেন।

পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়-উপস্থিত ভক্তদের উদ্দেশে প্রশ্ন করে নজিবুল বশর বলেন, ৪০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছি। নেওয়ার পর যদি ৬৫ কোটি টাকা জমা দেওয়া হয়, তাহলে কি টাকা আত্মসাৎ হয়? ওই মামলায় ৬৫ কোটি টাকা জমা হয়েছে তা উল্লেখ করেনি দুদক। দুদক নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপিকে চেনেনি।

তরীকত চেয়ারম্যান আরও বলেন, যা–তা কমেন্ট করছে সহকারী পরিচালক। চামড়া সব ছিঁড়ে ফেলব। মাইজভান্ডারীর গায়ে হাত!

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর ছেলে সৈয়দ তৈয়বুল বশর সৈয়দ আফতাবুল বশর শর্ত সাপেক্ষে পাঁচ বছর মেয়াদি টার্ম ঋণের জন্য আবেদন করেন। দেখা যায়, তাদের আবেদনের দুদিন আগে অর্থাৎ ১৮ ডিসেম্বর প্রাইম ফাইন্যান্সের বোর্ড সভায় ঋণ দুটি অনুমোদন করা হয়।

সৈয়দ তৈয়বুল বশরকে ২০ কোটি টাকা ও সৈয়দ আফতাবুল বশরকে ১৯ কোটি ৪০ রাখ টাকা টার্ম ঋণ দেয় প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। ওই ঋণ তারা ব্যাক্তিগত প্রয়োজন মেটাতে নিয়েছেন বলেও দুদকের করা মামলা এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

এর আগে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে দুদক। পরে সংস্থাটি একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্ত প্রতিবেদনে এমপি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর দুই ছেলে ও প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের কয়েকজন কর্মকর্তাসহ অন্যরা মিলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩
ইএস/জেএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।