ফরিদপুর: ফরিদপুরের সালথায় দুটি ইউনিয়নে মাঠের মধ্যে দিয়ে থাকা খালের উপর প্রায় কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি সেতু।
কিন্তু সেতুগুলোর একটিরও দুই পাশে নেই কোনো রাস্তা।
রাস্তাবিহীন সেতুগুলো কেন বা কার স্বার্থে নির্মাণ করা হয়েছে তার উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না এলাকাবাসী।
গত তিন বছর ধরে এভাবেই অকার্যকর হয়ে দাঁড়িয়ে সেতুগুলো। সেতু তিনটির চারপাশে ফসলি জমি। সংযোগ রাস্তা না করায় সেতুগুলোর উপর ওঠার মত কোনো পরিস্থিতি নেই।
স্থানীয়দের দাবি মাটি ভরাট ও রাস্তা তৈরী করে জনগণের চলাচলের উপযোগী করে তোলার।
জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রানালয়ের অর্থায়নে সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের শিহিপুর গ্রামের দক্ষিণ পাশে খালের উপর ৩২ লাখ ৪১ টাকা ব্যয়ে ৩৬ ফিট দৈর্ঘ্য একটি, গট্টি ইউনিয়নের বালিয়া স্কুলের পাশে নলডাঙ্গা মাঠের কুইচামোড়া খালের উপর ৩২ লাখ ৪১ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৬ ফিট দৈর্ঘ্য একটি এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তুগুলদিয়া গ্রামেবেদাখালী খালের উপর ৩০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩২ ফিট দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, বরাদ্দ হওয়া এসব সেতু স্থান পরিবর্তন করে নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুগুলোর বরাদ্দ যাতে ফেরত না যেতে পারে সেজন্য অপরিকল্পিতভাবে অনুপযোগীস্থানে সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি সেতুর একটিরও সংযোগ রাস্তা নেই। এমনকি সেতুগুলোর দুই পাশে কোনো মাটি ভরাটও করা হয়নি। নিঃসঙ্গ সেতুগুলো ব্যবহারে একেবারেই অনুপযোগী।
আজ পর্যন্ত একটি বাহনও উঠতে পারেনি সেতুগুলোতে - জানালেন উপজেলা ভাওয়াল ইউনিয়নের শিহিপুর গ্রামের বাসিন্দা আইয়ুব আলী, সামাল মোল্যা ও পরুরা গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম।
তুগুলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা সেকেন্দার আলী, সেমেল মাতুব্বর, আতিক মাতুব্বর ও ওলিয়ার রহমান বলেন, তুগুলদিয়া বেদাখালি খালের উপর নির্মিত সেতুটি মানুষের দশ পয়সারও কাজে লাগছে না। বরং সেতু না থাকা অবস্থায় ভালো ছিল। তখন মানুষ বাঁশের সাকো ও নৌকা দিয়ে পারাপার হতো। তাতে বেশি কষ্ট হতো না। আর এখন রাস্তাবিহীন সেতুর দু'পাশে বাঁশের সাকো তৈরি করে পারাপার হচ্ছে তুগুলদিয়া, মাঝারদিয়া, কুমারপট্টি ও ইউসুফদিয়া গ্রামের হাজারো মানুষ। এতে আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমাদের।
গট্টি ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামের বাসিন্দা ওহিদ মাতুব্বর, সবুজ হোসেন ও বিশু শেখ বলেন, বালিয়া স্কুলের পাশে নলডাঙ্গা মাঠের কুইচামারা খালের উপর খামাখা একটা সেতু নির্মাণ করে রেখেছে কয়েক বছর ধরে। সেতুটি মানুষের কোনো উপকারে লাগছে না। দরকার ছিল কি এত টাকা খরচ করে সেতু নির্মাণের?
এসব সেতুর দু'পাশে সংযোগ রাস্তা তৈরি করে জনগণের চলাচলের উপযোগী করে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া বলেন, শিহিপুর গ্রামের পিছনে থাকা সেতুর দুপাশে পরিষদের পক্ষ থেকে মাটি কেটে দেয়া হয়েছে। তবে পুরো রাস্তা কাটা হয়নি। আগামীতে পুরো রাস্তা নির্মাণ করা হবে। আর তুগুলদিয়া সেতুর দু'পাশে রাস্তা নেই বলে জানতে পেরেছি। দ্রুত ওই রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করব।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) পরিতোষ বড়ই বলেন, সেতুগুলোর দুইপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। আশা করি দ্রুত রাস্তাগুলো নির্মাণ করতে পারব।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩
এসএএইচ