ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

টেকসই গণতন্ত্রের জন্য আইপিএলডির পাঁচ প্রস্তাব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
টেকসই গণতন্ত্রের জন্য আইপিএলডির পাঁচ প্রস্তাব ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও টেকসই গণতন্ত্রায়নের জন্য রাষ্ট্র, সংবিধান, শাসন-প্রশাসন ও নির্বাচন বিষয়ে পাঁচটি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে ইনিশিয়েটিভ ফর দ্য প্রমোশন অব লিবারেল ডেমোক্রেসি (আইপিএলডি)।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ‘বাংলাদেশে টেকসই গণতন্ত্রায়নের লক্ষ্যে কতিপয় সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক সেমিনারে সংস্থাটির সদস্যরা এসব প্রস্তাব করেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত সেমিনারে আইপিএলডির সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিমের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্থানীয় শাসন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. তোফায়েল আহমেদ টেকসই গণতন্ত্রায়নের জন্য রাষ্ট্র, সংবিধান, শাসন-প্রশাসন ও নির্বাচন বিষয়ে পাঁচটি সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন। সেগুলো হলো—সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন; দ্বি-কক্ষবিশিস্ট আইনসভা প্রবর্তন; জাতীয় বিকেন্দ্রায়ন নীতি প্রণয়ন ও এ নীতির আলোকে শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস; একটি একীভূত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান আইন ও একক তফসিলে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন অনুষ্ঠান; ভোটার অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনে ‘পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি’ চালু এবং এনআরবি ও প্রবাসীদের ভোটাধিকার চর্চার সুযোগ দান।

সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে ড. আহমেদ বলেন, বিশ্বের ৯২টি দেশে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা চালু আছে। এ পদ্ধতির নির্বাচনে প্রতিটি ভোট সমান গুরুত্বের সাথে মূল্যায়িত হয়। চলমান সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতির নির্বাচনে সব সময় দেশ মাইনরিটি দ্বারা শাসিত হয়।

তিনি ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত চারটি নির্বাচনের প্রাপ্ত ভোট ও প্রাপ্ত আসনের গরমিল বিশ্লেষণ করে দেখান, ১৯৯১ সালে বিএনপি ৩০.৮১ শতাংশ ভোট পেয়ে ৭০ শতাংশ ভোটের বিপরীতে দেশ শাসন করে। ১৯৯৬ সালে আওযামী লীগ ৩৭.৬১ শতাংশ ভোট পায়। বিপরীতে ভোট পড়ে ৬২.৫৬ শতাংশ। এভাবে আসনভিত্তিক নির্বাচনে দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠের গণতান্ত্রিক শাসন বাধাগ্রস্ত হয়। একই রকমের ফলাফল বাকি দুটি নির্বাচনেও দেখা যায়। সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতির নির্বাচন সংখ্যালঘিষ্ঠের শাসনের একটি অস্বচ্ছ ফাঁদ।

দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তি দিয়ে ড. তোফায়েল বলেন, বিশ্বে ১৯২টি দেশে বিভিন্ন ধরনের আইনসভা আছে। তার মধ্যে ৮৭টি দেশের আইনসভা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও ভূটানের সংসদ দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট। এ সময় তিনি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পাঁচটি সুনির্দিষ্ট ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন।

বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ক জাতীয় নীতি প্রসঙ্গে ড. তোফায়েল বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি ও শাসন-প্রশাসনের অতিকেন্দ্রায়ন কোনো নতুন আবিষ্কার নয়। এখান থেকে ধীরে ধীরে বের হওয়ার জন্য একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ন প্রয়োজন।

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে স্থানীয় সরকারের নগর-গ্রাম বিভাজন এখন অর্থহীন। এ দেশে একীভূত ও সমন্বিত একটি স্থানীয় সরকার কাঠামোর পুনর্গঠন প্রয়োজন, যা হবে সংসদীয় পদ্ধতির এবং জেলা থেকে ইউনিয়নে। তখন একটি মাত্র তফসিলে সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

পোস্টাল ব্যালট চালুর বিষয়ে প্রবন্ধে আরও বলা হয়, দেশে নানা কারণে মানুষ ভোটকেন্দ্র বিমুখ। পাশাপাশি দেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ভোটার এনআরবি বা প্রবাসী শ্রমিক হিসাবে দেশের বাইরে অবস্থান করেন। ভোটদান তাদের সাংবিধানিক অধিকার থাকলেও তারা সেটি পারছে না। তাই পোস্টাল ব্যালট উম্মুক্ত করে তাদের ভোটদানের সুয়োগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।

সভাপতির বক্তব্যে প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিম বলেন, এ আলোচনা মূলত একটি মুক্ত বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা। দেশের রাজনৈতিক নেতারা, বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ নাগরিক এ চর্চা থেকে লাভবান হবেন।

প্রাক্তন সচিব ও আইপিএলডির সদস্য আবদুল লতিফ মন্ডলের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সংসদ সদস্য হাফেজ আহমদ মজুমদার, বাসদের রাজেকুজ্জান রতন, প্রাক্তন সচিব এহসান শামীম, প্রাক্তন পরিকল্পনা সচিব আখতার হোসেন, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না, বার্ডের প্রাক্তন পরিচালক হাসান সারওয়ার, আইপিএডির ট্রেজারার তাহমিন বানু প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
এসসি/এমজেএফ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।