ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাসে এমপিদের ভূমিকা রাখার আহ্বান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাসে এমপিদের ভূমিকা রাখার আহ্বান

ঢাকা: তামাক ব্যবহারের ফলে মানুষ হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিদিন তামাক ব্যবহারজনিত রোগে ৪৪৪ জন মারা যায়।

তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাসে সংসদ সদস্যদের ইতিবাচক ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।

বুধবার (১ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের আগেই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে গণমাধ্যমের কাছে প্রত্যাশা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এমপিদের প্রতি এই আহ্বান জানান।

জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বেসরকরি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুর‌্যাল পুয়র (ডরপ)।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তামাক ব্যবহারের ঝুঁকি ও ভয়াবহতা সবার সামনে তুলে ধরে ডরপ। তাতে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস-২০১৭) অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় পৌনে ৪ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে। কর্মক্ষেত্র, পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। ১৫ বছর ও তদূর্ধদের মধ্যে তামাক পণ্য ব্যবহারকারীর হার ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ। পরোক্ষ ধূমপায়ীর হার ১৮ শতাংশ। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর হার ২০ দশমিক ৬ শতাংশ।

তামাক ব্যবহারের ফলে মানুষ হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয় উল্লেখ করে ডরপ জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিদিন তামাক ব্যবহারজনিত রোগে ৪৪৪ জন মারা যায়। টোব্যাকো অ্যাটলাস ২০১৮ অনুসারে, তামাক ব্যবহারজনিত নানা রোগে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। এতে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাসে এমপিদের ইতিবাচক ভূমিকা রাখা জরুরি। এছাড়া জনগণের কাছে যেহেতু গণমাধ্যমই দ্রুততম সময়ে পৌঁছে, তাই আইনটির পক্ষে জনমত প্রভাবিত করতে গণমাধ্যমকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের অর্থপেডিকস বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শাহ আলম বলেন, তামাক ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সবাই জানে। তারপরও এটি ব্যবহার বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেই। এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে ক্ষতি করছে তা নিরোধ করতে খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাশ হওয়া জরুরি।

বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. এন. আই. ভূঁইয়া বলেন, ধূমপান ও তামাক ব্যবহারের পক্ষে তামাক কোম্পানিগুলোর প্রচারণা বন্ধ করতেই হবে। স্বাস্থ্যের পক্ষে যেহেতু এটি মারাত্মক ঝুঁকি তাই এর পক্ষে কথা বলার কোনও সুযোগ নেই।

প্রশ্ন উত্তর পর্বে গণমাধ্যমকর্মীরা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালের সংশোধনী) এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে মতামত দেন।

ডরপের নির্বাহী উপদেষ্টা মো. আজহার আলী তালুকদারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিড়ি শ্রমিক, ডরপ মাতৃ সংসদের সদস্য এবং যুব ফোরামের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিশ্বমানে উন্নীত করতে ২০২২ সালে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছু সংশোধনী প্রণয়ন করে। যা পরবর্তীতে জনমত যাচাইয়ের জন্য জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এই সংশোধনীর পক্ষে ১৬৯ জন এমপিসহ ১৬ হাজারের বেশি মানুষ ইতিবাচক মতামত দেয়। বর্তমানে এই আইনের চূড়ান্ত সংশোধনীটি প্রাথমিক যাচাইয়ের জন্য মন্ত্রিপরিষদে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
এসসি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।