ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রাস্তায় বেপরোয়া ট্রলি, কাটা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৩
রাস্তায় বেপরোয়া ট্রলি, কাটা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি

ফরিদপুর: জেলার বোয়ালমারী উপজেলায় বিভিন্ন স্থানের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে স্থানীয় ইটভাটায় বিক্রির হিড়িক চলছে। আর এ মাটি টানার কাজে নিয়োজিত ট্রলির বেপরোয়া চলাচলের কারণে যেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক-মহাসড়ক।

ট্রলিতে মাটি নেওয়ার সময় মাটি পড়ে সড়ক-মহাসড়ক চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সামনে বৃষ্টির মৌসুমে এসব সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও রয়েছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন স্থানের ভুক্তভোগীরা উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করলেও মিলছে না তেমন কোনো প্রতিকার। তবে এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও মোশারেফ হোসাইন।  

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চতুল ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের বাইখীর চৌরাস্তা বাজার হতে শুকদেবনগর পর্যন্ত রাস্তাটি জনগণের যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ওই রাস্তাটির আশু সংস্কার প্রয়োজন। গত কয়েকদিন ধরে ওই রাস্তা দিয়ে মাটি টানা ট্রলি চলাচলের কারণে রাস্তাটি একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এসব মাটির ট্রলিগুলো মাঝকান্দি-বোয়ালমারী-ভাটিয়াপাড়া মহাসড়ক দিয়ে বিভিন্ন ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। ট্রলিগুলো চলাচলের কারণে সৃষ্ট ধুলাবালিতে রাস্তার দুই পাশের ঘরবাড়ি ও বাইখীর চৌরাস্তা বাজারের দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে ওই এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণ এবং বাইখীর চৌরাস্তার ব্যবসায়ীগণ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। এমনকি রাস্তাটিও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

ওই সড়ক দিয়ে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাদরাসার শিক্ষার্থীরাসহ শতশত লোকজন যাতায়াত করেন। জনস্বার্থে ওই রাস্তাটি সংরক্ষণ ও ভাটায় মাটি টানা ট্রলি চলাচলে নিষেধাজ্ঞার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে ৮০ জন ব্যক্তি বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোশারেফ হোসাইনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগকারীদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার মো. সামসুল হক, ইউনুছ শেখ, সামাদ শেখ, সাজ্জাদ মোল্যা ও নাজমুল ফকির।

অপরদিকে বোয়ালমারী পৌরসভার সীমান্তবর্তী চতুল ইউনিয়নের বিল দাদুড়িয়ায় চলছে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা। জমির মালিক মো. কাশেম মোল্যা তার জমি থেকে অবৈধভাবে ভেকু দিয়ে মাটি উত্তোলন করে মাটি ব্যবসায়ী মো. সাহেব আলীর কাছে ছয় লাখ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানা যায়। এতে পাশের ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ক্ষতি সাধিত হবে উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগে দিয়েছেন অভিযোগকারীরা।

এ কারণে কলারণ জুট মিলের পশ্চিম পাশের জমির মালিকরা গত ২০ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগের পরেও উপজেলা প্রশাসন ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন চতুল ইউনিয়ন পরিষদের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা মো. ওহিদুজ্জামান।

অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসাইন বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। তবে অভিযোগে যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে সেটা সঠিক নয়। প্রত্যেক এলাকায় গ্রুপিং থাকে। এক গ্রুপ এটা হয়তো করেছে। আর ফসলি জমি থেকে ট্রলিতে মাটি টানার বিষয়টি নিয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কয়েকদিন আগে কয়েকটি ট্রলি গাড়ি ধরে এনে সংশ্লিষ্টদের জরিমানার আওতায় আনা হয়েছিল।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কোনো ভাবেই ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। যারা এটা করবে, তাদেরকেই জরিমানা করে এগুলো বন্ধ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৩
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।