ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মেয়াদ শেষেও বীমার টাকা দিচ্ছে না প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্স

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৩
মেয়াদ শেষেও বীমার টাকা দিচ্ছে না প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্স

ঠাকুরগাঁও: দুই বছর আগে বীমার মেয়াদ শেষ হলেও টাকা পেতে প্রতি মাসে তিন-চার বার করে অফিসে ঘুরছেন গ্রাহকরা। তারপরেও মিলছে না কাঙ্খিত সেই টাকা।

আজ-কাল করতে করতে টাকা দিতে বছরেরও বেশি সময় পার করার অভিযোগ উঠেছে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্স নামে বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (০২ মার্চ) দুপুরে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্সের অফিসে আসা কয়েকজন গ্রাহক এমন অভিযোগ তোলেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২৮ মাইল থেকে আসা ভুক্তভোগী রহিতুন নেছা (৫২) বলেন, বীমা কারার অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে বলে বলে যে কতো বুঝানো হয়েছিল তার হিসেব নেই। অসুস্থ হলে নাকি টাকা দিবে, যে কোনো বিপদে-আপদে তারা পাশে থাকবে, মরে গেলে মূল টাকার কয়েকগুন দেবে আরও অনেক কিছু। তারপর তাদের কথা অনুযায়ী আর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পলিসি করেছি। অথচ এখন ঘুরতে ঘুরতে আমি হয়রান। লাভের টাকা তো দূরের কথা, আসল টাকাই পাই না।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে ১২ বছর মেয়াদি বিমা করি। যার পলিসি নাম্বার ০৬০৯০৭২-৭। দুই বছর আগে সেটার মেয়াদ শেষ হলেও তারা টাকা দিচ্ছে না। আজ হবে, কাল হবে বলে বলে শুধু সময় নিচ্ছে। এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে তাদের অফিসে গেলে উল্টো তারা উগ্র আচরণ করেন।

ভুক্তভোগী রহিতুন নেছা বলেন, এক বছর আগে বলেছিল নতুন একাউন্ট করলেই টাকাটা পাবো। আমি সুদের উপর ২ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে এখানে জমা দিছি। তারপরেও তারা আগের বীমার টাকা দেয়নি। উল্টো এখন সুদের ওপর টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। আজকে খোঁজ নিতে আসলে বলে আগামী মাসে আসতে। ম্যানেজার শুধু ফোনে কথা বলেন। সরাসরি উনার দেখা পাই না।

আরেক ভুক্তভোগী তাহেরা বেগম বলেন, মেয়াদ শেষে যে টাকা পাওয়ার কথা সেটার কোনো খবর নেই। তাদের অফিসে এলে বার বার বলে ঢাকা থেকে কাজ হচ্ছে না। আমরা যখন বিমা শুরু করি তখনকার ১০০ টাকার মূল্য এখন অনেক বেশি। কিন্তু কোনো টাকাই তারা দিচ্ছে না। শুধু তারিখের পর তারিখ দিয়ে সময় নিতে থাকেন।

প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির ঠাকুরগাঁও অফিসে সরেজমিনে দেখা যায়, এক কম্পিউটারে টেবিলে একজন কাজ করছেন। তার পাশে আছেন একজন পিয়ন। শুধু দুইজনে মিলে পরিচালনা করছেন জেলা কার্যালয় অফিস। ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি সপ্তাহে দুইদিন অফিস করেন। তাও আবার সেই দুইদিন কবে কবে সেটাও বলতে পারেননি অফিসের পিয়ন।

অফিস থেকে বের হওয়ার সময় দেখা মিলে আমিনুল ইসলাম নামে এক যুবকের। তার বাবার পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে তিন বছর আগে। অফিসে কয়েকবার এসে হয়রানী হতে হয়েছে তাকে। তিনি বলেন, আমার বাবা এখানে বীমা করেছিলেন। সেটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৩০ বারের বেশি আসা-যাওয়া করছি। আমার গ্রামের অনেকেই এমন ভুক্তভোগী আছেন।

ফোনে কথা হয় প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজার আলিমুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখনও ৫০০-৬০০ গ্রাহকের মেয়াদ পূর্তির পরও টাকা দেওয়া হয়নি। সবাই মনে করেন যে, আমরা এখান থেকে তাদের টাকা ফেরত দিচ্ছি না। কিন্তু এটা আসলে ঢাকা থেকে দেরি করার কারণে আমারা দিতে পারছি না। গত বছর অনেকজনকে পলিসির টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে বাকিগুলে দিয়ে দেওয়া হবে।

সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ঠাকুরগাঁওয়ের ম্যানেজার হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বিমার মেয়াদ শেষ হলে টাকা আটকে রাখার কোনো সুযোগ নেই। তবে কিছু কোম্পানির এমন ভুলের জন্য মানুষ বীমা করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। আমরা আশা রাখছি তারা সমস্যাগুলো সমাধান করবেন। তাদের জন্য জনসাধারণের কাছে আমরাও খারাপ হয়ে যাচ্ছি।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, মেয়াদ শেষেও টাকা না দেওয়াটা দুঃখজনক বিষয়। আমরা বীমা কোম্পানিদের এ বিষয়ে জোরালো তাগিদ দিয়েছি। তারপরেও কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ করলে আমরা পদক্ষেপ নেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।