ঢাকা, বুধবার, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শনিবার ছেঁউড়িয়ায় বসছে সাধুর হাট

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৩
শনিবার ছেঁউড়িয়ায় বসছে সাধুর হাট

কুষ্টিয়া: ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ -এবারের এ স্লোগানে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় শনিবার (৪ মার্চ) থেকে শুরু হচ্ছে বাউল সম্রাট লালন শাহ -এর আখড়াবাড়িতে তিনদিনের দোল উৎসব। এদিন সন্ধ্যায় এখানে সাধুর হাট উদ্বোধন করা হবে।

 

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং লালন একাডেমির আয়োজনে ছেঁউড়িয়ার লালন মাজার প্রাঙ্গণে শনিবার থেকে সোমবার (মার্চ ০৪-০৬) পর্যন্ত চলবে তিনদিনের দোল উৎসব। আয়োজন থাকবে গ্রামীণ মেলারও।

শনিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে সাধুর হাট উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।  

এ উপলক্ষে আখড়াবাড়িতে জড়ো হয়েছেন সাধু ভক্ত-অনুসারীরা। দু-একদিন আগেই আগত ভক্ত আশেকানরা ঠাঁই নিয়েছেন সাঁইজির তীর্থ ভূমিতে। খণ্ড খণ্ড মজমায় চলছে ভাবের আদান-প্রদান আর তত্ত্ব আলোচনা।

শনিবার রাতে লালন মঞ্চে আলোচনা শেষে গান পরিবেশন করবেন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত খ্যাতনামা শিল্পীরা। আখড়াবাড়ির মাঠে বসেছে গ্রামীণ মেলা।
সাধুদের মতে লালন অনুসারীরা সাঁইজির জীবদ্দশা থেকে পালিত এই দোল উৎসব স্মরণে সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। তাইতো অনুষ্ঠানের আগেভাগেই জড়ো হয়েছেন সাঁইজির ধামে। বাউল শিরোমনি লালন শাহের অনুসারীদের মধ্যে এক নিবির আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সে কারণে প্রতি বারের মতো এবারও তার কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।  

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেউড়িয়া গ্রামের এ আখড়াবাড়ি ছিল বাউল সম্রাটের ফকির লালন শাহ্ -এর প্রধান অবস্থান এবং এখানেই তার জীবনের শেষ প্রয়াণ হয়।  

তবে বর্তমান সেখানে অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে লালন একাডেমি। এখানে লালন সমাধীস্থলকে স্মরণীয় করতে ১৯৬২ সালে একটি সমাধী সৌধ নির্মিত হয়েছে।
ভক্ত, আশেকান, অনুসারী ও শিষ্যদের মতে, লালনকে তরুণ বয়সে রোগাক্রান্ত ও অচেতন অবস্থায় ছেঁউড়িয়া গ্রামের কালী গঙ্গার পূর্ব পাশে পড়ে থাকতে দেখে গ্রামের অন্যদের সাহায্যে সেখান থেকে উদ্ধার করেন স্থানীয় মলম ফকিরের স্ত্রী মতিজান। বাড়িতে এনে অসুস্থ লালনকে সেবা যত্ন করে সুস্থ করে তোলেন। এভাবে সান্নিধ্য লাভের মধ্য দিয়ে মতিজানের স্বামী মলম কবিরাজ নিজেও লালন সাঁইয়ের অনুসারী হয়ে উঠেন।

লালনের জীবদ্দশায় এক বিধবা নারীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন আখড়াবাড়িতে যিনি পরবর্তীকালে লালনের স্ত্রীরূপে এবং বিশাখা নামে পরিচিতি পান। লালন ফকির প্রতি বছর শীতকালে মহোৎসব করতেন, এবং সে উৎসবে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভক্ত আশেকান সাধু বাউল ফকিরেরা মিলিত হতো। ওই উৎসবকে ঘিরে সেখানে বাউল গানের আসর হতো এবং লালন ও তার স্ত্রী পরিচয়ধারী বিশাখাও সেই জলসায় অংশ নিতেন। সেখানে সকল গানই মূলত: লালন নিজেই রচনা ও সুর সংযোজন করতেন যা পরে তার শিষ্য-অনুসারীরা রপ্ত করতেন।
লালনের জন্ম সংক্রান্ত তথ্যানুযায়ী সঠিক সময়কাল শনাক্তকরণ সম্ভব না হওয়ায় তিনি জীবদ্দশায় প্রকৃত অর্থে কত বছর বেঁচে ছিলেন তার নির্ণয় করা যায়নি। তবে তিনি যে একজন দীর্ঘায়ু ব্যক্তি হিসেবে বেঁচে ছিলেন, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই বলে শিষ্য-অনুসারীদের ধারণা।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্কেচটি অংকনের এক বছর পর ১২৯৭ সালের ১লা কার্তিক ইংরেজী ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন লালন ফকির।

তৎকালীন কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত হিতকারী নামে পাক্ষিক পত্রিকায় লালন ফকিরের তিরোধানের ওপর রচিত সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। ওই সম্পাদকীয় লেখার বিবরণানুযায়ী মৃত্যুকালে লালনের বয়স হয়েছিল ১১৬ বছর।  

লালন ফকির দীর্ঘ সময়কাল ধরে তার নিজস্ব আত্ম দর্শনের আলোকে ভক্ত আশেকান ও শিষ্যদের নিয়ে যেসব উৎসব মুখর কার্যক্রম করতেন তারই ধারাবহিকতায় আজও পর্যন্ত দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভক্ত শিষ্য অনুসারীরা পালন করতে বছরের দুইটি দিন যথা দোল উৎসব এবং পহেলা কার্তিক সাঁইজির তিরোধান দিবস পালন করতে মিলিত হয়ে থাকে এই সাধন তীর্থ ছেউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে। এসব উৎসবে লালনের রেখে যাওয়া মানব মুক্তির সহাশ্রাধিক আধ্যাত্মিক বাণী সম্বলিত গান গাওয়া হয়। সেই সাথে আখড়াবাড়ি সংলগ্ন কালী গঙ্গা মাঠে বসে উৎসবমুখর গ্রামীণ মেলা।

লালন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সেলিম হক জানান, প্রতিবারে মতো এবারও আগত সাধু ভক্তদের সেবায় নেওয়া হয়েছে সব ব্যবস্থা।  

জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, তিন দিনব্যাপী এ লালন স্মরণোৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), সাদা পোশাকে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এছাড়া দায়িত্বে থাকবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও।

বাংলা ১২৯৭ সালের পহেলা কার্তিক সাধক পুরুষ লালন সাঁই দেহত্যাগ করেন। এরপর থেকে লালনের অনুসারীরা প্রতি বছর ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ দিনটি পালন করে আসছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।