ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ডাবলু সরকারকে আ.লীগ থেকে ফের অপসারণের দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪২ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২৩
ডাবলু সরকারকে আ.লীগ থেকে ফের অপসারণের দাবি

রাজশাহী: মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে দল থেকে অপসারণের দাবি উঠেছে। শনিবার (৪ মার্চ) সকালে এক বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এ দাবি করা হয়।

জানা গেছে, বেলা পৌনে ১১টার দিকে মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে প্রথমে ১৫ মিনিটের একটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিক্ষোভকারীরা। পরে তারা একটি মিছিলও করেন। অংশগ্রহণকারীরা মিছিল নিয়ে জিরোপয়েন্ট থেকে পশ্চিম দিকে চলে যান। রাজশাহী আওয়ামী পরিবারের ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সচেতন রাজশাহীবাসীর ব্যানারে ডাবলু সরকারকে আওয়ামী লীগ থেকে অপসারণের দাবি করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এটি শুরুর পর তার লোকজন অংশগ্রহণকারীদের ব্যানার কেড়ে নেয় ও কর্মসূচি পণ্ড করে দেয়।

শনিবারের মানববন্ধন কর্মসূচিতে ডাবলু সরকারকে অপসারণসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে ব্যানার ও ফেস্টুন প্রদর্শন করা হয়। এতে লেখা ছিল ‘ডাবলু সরকারের নোংরা ভিডিও, রাজনীতিতে অশনিসংকেত ও সমাজের জন্য বিপজ্জনক’, ‘অবিলম্বে ডাবলু সরকারকে রাজনীতি থেকে অপসারণ করতে হবে’, ‘নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত রাজনীতির দুষ্টক্ষত ডাবলু সরকারকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ’

এছাড়া তার ছবিতে ক্রস চিহ্ন এঁকে দেওয়া হয়। কয়েকজনের হাতে ওই ছবি সংবলিত ফেস্টুনে লেখা ছিল ‘ডাবলুর পেছনের গডফাদার কে, রাজশাহীবাসী জানতে চায়’, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী, নির্বাচনের বছরে কারও দ্বারা দল বিব্রত হয়, এমন কাউকে এক সেকেন্ডও দলে রাখা যায় না। ’

বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আজ কর্মসূচির শুরু থেকেই সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে অবস্থান নেয় পুলিশ। আজও কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন ছাত্র মৈত্রীর রাজশাহী মহানগর শাখার সাবেক সভাপতি আবু রায়হান। তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, রাজশাহী আওয়ামী পরিবারের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি আয়োজনের কথা বলা হলেও মহানগর আওয়ামী লীগের কেউ এই কর্মসূচিতে ছিলেন না। কিন্তু কর্মসূচির আয়োজক আইনজীবী আবু রায়হান মাসুদের দাবি, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ তার সঙ্গেই রয়েছে। কিন্তু তারা ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে ‘কলঙ্ক’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এ দাগ যেন রাজশাহী আওয়ামী লীগ, সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও প্রধানমন্ত্রীর গায়ে না লাগে। নির্বাচনের বছরে যেন কারও কাছে বিব্রত হতে না হয়। তাই ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বৃহস্পতিবার যারা হামলা করে বিক্ষোভ থেকে ব্যানার কেড়ে নিয়েছিল, তাদের কড়া সমালোচনা করে আবু রায়হান। তিনি বলেন, আমরা চাই না, আগামী নির্বাচনে আমাদের ওপরে কোনো ধরনের কলঙ্ক নেমে আসুক। বিরোধী দল কোনো দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দিক। এই ধোঁয়া তুলে জামায়াত-শিবির চক্র আমাদের চরিত্র নিয়ে কোনো কথা বলুক, তা চাই না।

কর্মসূচি চলাকালে ডাবলু সরকারের উদ্দেশে এ আইনজীবী বলেন, যে ভিডিও প্রকাশ পেয়েছি সেটি যে আপনার নয়, সেটি আপনি আজও প্রমাণ করতে পারেননি। পরে ডাবলু সরকারের ভাই সেডু সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) চাকরি করেন। অফিস চলাকালে কীভাবে এসে আমাদের কর্মসূচিতে হামলা করলেন? রুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার বিরুদ্ধে আমরা আইনি নোটিশ পাঠাব।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার কর্মসূচিতে সেডু সরকারের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছিল।

বিক্ষোভ মিছিল শেষ পর্যন্ত যেখানে গিয়ে থামে, সেখানে উপস্থিত ছিলেন বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহরাওয়ার্দী হোসেন। তার কাছে ডাবলু সরকারের ‘নোংরা ভিডিও’ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ওই ভিডিওটি তার (ডাবলু) দাবি অনুসারে এডিট করা। বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন। এ ব্যাপারে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়।

এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার তাকে নিয়ে একটি আপত্তিকর ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। এজাহারে তিনি ওই ভিডিওটি এডিট করা বলে উল্লেখ করেন।

এজাহারে তিনি আরও বলেন, একটি অনলাইন পোর্টালের ফেসবুক পেজে কে বা কারা আমাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করতে এডিটিংয়ের মাধ্যমে মিথ্যা, অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে আমার সম্মানহানির চেষ্টা করছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই ভিডিও নিয়ে মানুষের মুখে মুখে আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। ম্যাসেজিং অ্যাপ হোটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের স্মার্টফোনে এই ভিডিওটি পাঠানো হচ্ছে। তিনি এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

সামগ্রিক বিষয়ে ডাবলু সরকারের সঙ্গে আলাপের চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু কোনোভাবে তাকে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২৩
এসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।