ঢাকা, রবিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিপাকে বাওয়ালি ও গোলপাতা ব্যবসায়ীরা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২৩
বিপাকে বাওয়ালি ও গোলপাতা ব্যবসায়ীরা গোলপাতা গাছ। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: এক সময় গোলপাতার ঘরের প্রচলন থাকায় এর চাহিদাও ছিল বেশ। সময়ের আবর্তনে দৃশ্যপট বদলে গেছে।

ঢেউটিনের ব্যবহার বাড়ায় গোলপাতার চাহিদা কমে গেছে। মৌসুম শেষের দিকে চলে এলেও সুন্দরবনে যারা গোলপাতা সংগ্রহ করেন (বাওয়ালি) তারা গোলপাতা কেটেও কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না। এ কারণে তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। গোলপাতার চাহিদা কমে যাওয়ায় বাওয়ালিদের সঙ্গে সঙ্গে বিপাকে পড়েছেন গোলপাতা ব্যবসায়ীরাও।

খুলনার সুন্দরবন উপকূলীয় উপজেলা দাকোপের সুতারখালী এলাকার বাসিন্দা বাওয়ালি জামাল সানা বাংলানিউজকে বলেন, গোলপাতার দাম এখন খুবই কম। বলতে গেলে পানির দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কাউন ২৪-২৫শ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। সুন্দরবনের পাস পারমিট নিয়ে শ্রমিক খাটিয়ে গোলপাতা কেটে এনে বিক্রি করে যে টাকা খরচ হয় তাও ওঠে না।

অনুরূপভাবে কালা বগি এলাকার বাসিন্দা কাওসার বলেন, সুন্দরবন থেকে গোলপাতা কেটে এনে খরচই ওঠে না। বাজারে গোলপাতার কদর নেই। টিনের প্রচলন এখন বেশি। এসব কারণে খুব কম সংখক লোক এখন বাওয়ালি পেশায় রয়েছে।

একাধিক বাওয়ালি বলেন, প্রতি কুইন্টাল গোলপাতা আহরণে রাজস্ব ছিল ২৫ টাকা। আর তা বাড়িয়ে প্রতি কুইন্টাল ৬০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এরপরে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। সে হিসাবে বড় একটি নৌকায় পাস পেতে ১৩ হাজার টাকা রাজস্ব দিতে হচ্ছে। শ্রমিকের খরচও অনেক বেড়েছে। আগে মাসে ৫/৬ হাজার টাকায় একজন শ্রমিক পাওয়া যেতো, আর এখন ২০ হাজার টাকা লাগে। এক নৌকা গোলপাতা আনতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। পেশা টিকিয়ে রাখতে এখনও বনে যাচ্ছি। গরানের অনুমতি মিললে আমরা টিকে থাকতে পারতাম। এছাড়া রাজস্ব মওকুফের দাবি জানান তারা।

খুলনার সোনাডাঙ্গা এম এ বারি সড়কের গোলপাতা বিক্রেতা আব্দুল আজিজ বলেন, বর্তমানে প্রতি পোন গোলপাতা বিক্রি হচ্ছে ৩শ টাকা দামে।

জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা, পটুয়াখালী, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার লোকদের ঘরের চাল ছাওয়ার জন্য গোলপাতা ব্যাপক ব্যবহৃত হত। গ্রাম-গঞ্জের বেশির ভাগ ঘরের চাল ছাউনীতে এখন টিন কিংবা এ্যালবেস্টারের ব্যবহার হচ্ছে।

এদিকে গোলপাতার চাহিদা কমলেও আহরণ খরচ বেশি হওয়ায় দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। টিন বা এ্যালবেস্টারের চেয়ে তুলনামূলক টেকসইও অনেক কম। ফলে টিন কিংবা এ্যালবেস্টারের ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে আর গোলপাতার কদর কমেছে।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে শরণখোলা, চাঁদপাই ও শ্যালা নামক তিনটি গোলপাতা কূপ রয়েছে। এছাড়া সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগে খুলনা রেঞ্জেও তিনটি গোলপাতার কূপ রয়েছে। এগুলো-সাতক্ষীরা, আগুয়া শিবসা ও শিবসা কূপ। সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণ মৌসুম চলছে। ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সুন্দরবন থেকে গোলপাতা আহরণ চলবে।

তবে প্রতিবছর ক্রমাগত গোলপাতা আহরণ কমছে। বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না। গত বছর অনেক অফিসে লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশও রাজস্ব আয় হয়নি।

চলতি বছরে সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় মাত্র ২৮টি নৌকার পাস নিয়ে ১৬৮ জন বাওয়ালি সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন। এবার সেখানে ৪৬ হাজার মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গতবার সাতক্ষীরায় ১০ হাজার মেট্রিক টন গোলপাতা আহরণ করা হয়।

খুলনা রেঞ্জের আওতায় ৫টি স্টেশনে ৩ হাজার ৬৯ মেট্রিক টন গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রথম দফায় ১১৮টি নৌকা পাস নিয়েছে। চাঁদপাই রেঞ্জের দুটি কুপ থেকে এবছর ৭ হাজার মেট্রিক টন গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে এ রেঞ্জের আওতায় মাত্র ৩৭টি নৌকার পাস দেওয়া হয়েছে। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে সাত হাজার মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১০ শতাংশ গোলপাতা আহরণ করা হয়।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ঢেউটিন তুলনামূলক সস্তা গোলপাতার চাহিদা কমে গেছে। এর কারণে বাওয়ালিরা এখন গোলপাতা কাটতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর নিয়ম মাফিক গোলপাতা সংগ্রহ করলে গোলগাছের পরিচর্যা হয় এবং এর পরিমাণও বেড়ে যায়। কিন্তু সময় মতো গোলপাতা কাটা না হলে পাতা নষ্ট হয়ে যায়। ঝার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই গোলপাতা নিয়ে আমাদের এখন ভাবার সময় এসেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২৩
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।