জয়পুরহাট: জমে উঠেছে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার ৫১৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী গোপিনাথপুর মেলার ঘোড়ার হাট। পছন্দের প্রাণীটিকে পেতে ক্রেতাদের মধ্যে শুরু হয়েছে রীতিমতো প্রতিযোগিতা।
মেলায় মিঠাই-মিষ্টান্ন, শিশুদের খেলনা সামগ্রীসহ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নাগরদোলা নজর কেড়েছে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দর্শনার্থীদের। মেলায় নিরাপত্তা জোরদারে কাজ করছেন পুলিশের সিভিল ও পোশাকধারী সদস্যরা।
বুধবার (০৮ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর ঐতিহ্যবাহী গোপিনাথপুর মেলার ঘোড়ারহাট। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন তারা। এবার এ মেলায় মহারাজা, বাদশা, বিজলী, রানি, সুইটি, বাহাদুর, পাওয়ার হর্সসহ হরেক রকম নামের ঘোড়া এসেছে।
দরদাম ঠিকঠাকের পর একটি খোলা মাঠে ঘোড়া নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ক্রেতাকে দেখানো হয় ঘোড়ার দৌড়। ওদের ক্ষিপ্রতা আর বুদ্ধিমত্তায়ও মেলে নামের স্বার্থকতা। ঘোড়াগুলোর দুলকি চলনে বিদ্যুৎ গতি, চোখের পলকে যেন মাইল পার। এমন নানামুখি গুণের কারণে দেশি-বিদেশি ঘোড়াগুলোর কদরও বেশি। তাই তো সারাদিন ঘুরে দরদাম ঠিক করেই পছন্দের ঘোড়াটিকে বেচাকেনা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর উপজেলা থেকে আসা বিপ্লব হোসেন, বগুড়ার গাবতলী উপজেলা থেকে আসা নেয়ামত হোসেন, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা থেকে আসা শরাফত আলী জানান, দুপুরের পর থেকেই হাজারো ঘোড়ার মধ্যে পছন্দের ঘোড়াটি দেখছেন। দামে দরে মিললে ঘোড়া কিনবেন।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা থেকে আলী হোসেন এসেছেন ঘোড়া বিক্রি করতে। তিনি বলেন, তার ঘোড়াটির দাম করেছেন দেড় লাখ টাকা। কিন্তু দুই লাখের কমে তিনি বিক্রি করবেন না। ভারতের দুটি ঘোড়া মহারাজা ও বাদশা নিয়ে এসেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ডালিম নামে এক ব্যবসায়ী। তাজী জাতের এ দুটি ঘোড়া তিনি বিক্রি করবেন ১৫ লাখ টাকায়। কিন্তু মেলার দুই দিনেও এখনো তেমন সাড়া পাননি।
ব্যতিক্রমী এই মেলায় একসঙ্গে শতশত ঘোড়া দেখতে পেরে খুশি দর্শনার্থীরা। তবে তারা ঘোড়ার খেলা দেখার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নির্দিষ্ট একটি নিরাপদ মাঠ তৈরির আহ্বান জানান।
ঐতিহ্যবাহী গোপিনাথপুর মেলা কমিটির আহ্বায়ক ও স্থানীয় গোপিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে এবার এই মেলায় ১৩ দিনের মধ্যে ৫দিনই থাকবে ঘোড়া ও গবাদি পশুর হাট। বাকি দিনগুলো থাকে জামাই-মেয়েদের পদচারণায় মুখর। সেই কয়েকদিন মেলায় বসে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নাগরদোলা, চড়কিসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা, গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার্য সব ধরনের তৈজসপত্র ও মিঠাই-মিষ্টান্ন।
এ ব্যাপারে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক জানান, মেলায় নিরাপত্তা জোরদারে কাজ করছেন পুলিশের সিভিল ও পোশাকধারী সদস্যরা।
৭ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এ ঘোড়ার মেলা চলবে ১২ মার্চ পর্যন্ত। আর এই ৫ দিনে অন্তত ২ হাজার ঘোড়াসহ ৫ হাজার গবাদী পশু বিক্রি হবে অন্তত ৮ কোটি টাকার।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২৩
আরএ