ঢাকা, সোমবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৪০ বছর ধরে বড়শিতে মাছ শিকারে চলে ৪ বোনের সংসার

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২৩
৪০ বছর ধরে বড়শিতে মাছ শিকারে চলে ৪ বোনের সংসার

বরগুনা: ডিঙি নৌকায় ভেসে খালে বিলে ও নদীতে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করেন বরগুনার তালতলী উপজেলার নিওপাড়া এলাকার হাচেন মোল্লার চার মেয়ে।  

শুধু মাছ শিকার করেই সংসার চলে তাদের।

নদীতে মাছ থাকলে সংসারে সব সদস্যর পেটে ভাত জোটে। আর মাছ না থাকলে থাকতে হয় অনাহারে। এভাবেই সংসার চালাতে ৪০ বছর যাবত বড়শি ধরে আছেন তারা।

এ চার নারী হলেন -  জরিনা বেগম, ফাতেমা বেগম, হালিমা বেগম ও রাহিমা বেগম।  

জরিনা বেগম বলেন, কখনো হাত দিয়ে, কখনো বড়শি দিয়ে, আবার কখনো জাল দিয়ে মাছ ধরি। এভাবেই দিনরাত শ্রম দিয়ে অনেক কষ্টে করে জীবন পার করছি।  

ছোটবেলা থেকেই বড়শি দিয়ে মাছ ধরে চলছে জরিনাদের জীবন সংগ্রাম। আন্ধারমানিক নদীতে মাছ শিকার করেন তারা। তাদের দেখাদেখি এলাকার অনেকেই অবসর সময়ে মাছ শিকারে নামেন। কেউ হয়তো শখে, কেউ বা জরিনাদের মতোই জীবিকার তাগিদে।

জরিনা জানান, নিওপাড়ায় তাদের মতো আরও অনেকেই আছেন, যাদের সংসার চলে শুধু মাছ শিকার করে। অন্য কোন কাজ তারা করেন না।  

নিওপাড়া এলাকায় গেলে দেখা যায়, মাছ পাওয়ার আশায় প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে স্লুইসগেট সংলগ্ন নদীতে সারিবদ্ধ নৌকায় বসে বড়শির ছিপ ফেলে মাছ ধরছেন চার বোন। কারো বড়শিতে চিংড়ি, পুঁটি, টেংরা, বোয়াল আবার কারো ধরা পড়ছে কোড়াল, রুই, পাঙাসসহ নানা প্রজাতির মাছ। এসব মাছ বাজারে নিলে ৩শ টাকা থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হয়। তবে কখনো কখনো খালি হাতেও ফিরতে হয়।

চার বোনেরই বিয়ে হয়েছে বহু আগেই। তাতে কেবল সংসার বড় হয়েছে তাদের। ভাগ্য তেমন বদলায়নি। সরকারি আবাসন প্রকল্পে বসবাসের সুযোগ ছাড়া জীবনে তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি তাদের।  

এর কারণ হিসেবে জরিনা বেগম বলেন, আমাদের বাবার তেমন ভিটে মাটি, অর্থ-সম্পদ ছিল না। বিয়ে দিয়েছে তাও গরিব বাড়িতে, বয়স্ক রোগাক্রান্ত স্বামী কাজ করতে পারে না। বড়শি দিয়ে আমি মাছ ধরে যা আয় রোজগার করি তা দিয়েই সংসার চালাতে হয়। '

আরেক বোন রাহিমা বেগম বলেন, ছোট সময় থেকেই বড়শি দিয়ে মাছ ধরি। প্রথম দিকে রাতে মাছ ধরতাম। পরে পেটের টানে দিনেও মাছ ধরা শুরু করছি। মানুষে লজ্জা দিত মহিলা মাছ ধরছে বলে। কিন্তু আমাদের তো উপায় নাই। মাছ ধরতে পারলে খেতে পারি, আর মাছ না পেলে না খেয়েই থাকতে হয়। মানুষের কথা কানে আনিনি। এখন এভাবেই চলছে আমাদের জীবন।

তবে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সংসার চালানো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে জরিনাদের। কারণ, বড়শিতে আর আগের মতো মিলছে না মাছ।  

তিনি বলেন, এখন আর আগের মতো মাছ উঠে না। কয়েক বছর আগেও নদীতে পোয়া, আঁইড়, ফাহা, শিলল, গাঁগড়া, রিঠা, কাউন, ভোল, পাবদা, সরপুঁটি ও কোরালের মতো বিভিন্ন মাছ দেদার পাইতাম। নদীতে মাছের সংখ্যাও দিন দিন কমছে। আমার মতো অনেক জেলে পরিবারের ছেলেমেয়ে নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটছে।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, সেই ছোটবেলা থেকে নদীতে মাছ ধরি। কিন্তু যারা কোনদিনও মাছ ধরে নাই তারাও জেলে কার্ডের চাল পায়। রাতদিন মাছ ধরেও আমরা চাল পাই না।  

এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, নারী হওয়ায় এই চার বোনকে জেলে তালিকাভুক্ত করতে পারছি না৷ তবে এরা গরু, ছাগল ও অন্যান্য প্রণোদনার মাধ্যমে যেন জীবিকা নির্বাহ করতে পারে এবং এর মাধ্যমে তাদের সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর মধ্যে আনার পরিকল্পনা নিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।