ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

উত্তরায় সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাই

বেশি টাকা দেখে ভয় পায় ছিনতাইকারীরা, ফেলে যায় ২ ট্রাংক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
বেশি টাকা দেখে ভয় পায় ছিনতাইকারীরা, ফেলে যায় ২ ট্রাংক গ্রেফতার ছিনতাইকারীরা

ঢাকা: ছিনতাইকারীরা দুটি টাকার ট্রাংক ভেঙে দুটি চালের বস্তা ও পাঁচটা ব্যাগ টাকা ভর্তি করে। বাকি দুই ট্রাংকের টাকা দেখে তারা ভয় পেয়ে যায়।

কোনো ব্যাগ না থাকায় টাকা ও ট্রাংক ফেলে পালিয়ে যায়। মাইক্রোবাসের ড্রাইভারের সিটের উপরে একটা ব্যাগ ফেলে ও নিজেরা কাপড়চোপড় পরিবর্তন করে ফেলে চলে যায়। অবশিষ্ট ব্যাগটি মাইক্রোবাসের পেছনের সিটে থাকা ড্রাইভার সুস্থ হয়ে নিজ হেফাজতে নেয়। এছাড়াও সে ট্রাংক থেকে অবশিষ্ট টাকা ভরে সে তার ভাইয়ের হেফাজতে দেয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারদের স্বীকারোক্তিমতে বাসা থেকে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

রাজধানীর উত্তরায় ডাচ বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত ৮ জনকে গ্রেফতারের পর এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

রোববার (১২ মার্চ) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন ডিবি প্রধান। গ্রেফতারদের কাছ থেকে আরও ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শনিবার (১১ মার্চ) রাতে ঢাকার মিরপুর, বনানী, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আড়াই কোটির বেশি টাকা উদ্ধারসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- মো. সানোয়ার হাসান (২৮), মো. ইমন ওরফে মিলন (৩৩), মো. আকাশ মাদবর (২৫), সাগর মাদবর (২২), মো. বদরুল আলম (৩৩), মো. মিজানুর রহমান (২০), মো. সনাই মিয়া (২৮) ও এনামুল হক বাদশা (২৬)।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন ৯ মার্চ উদ্ধার করা ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ নিয়ে ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে মোট উদ্ধার হয়েছে ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। উত্তরার তুরাগ এলাকায় ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের সোয়া ১১ কোটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় এখনো অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ডিবি পুলিশের একটি দল রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করে। এরপর বিভিন্ন সূত্র ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে শনিবার (১১ মার্চ) রাতে ঢাকা, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ব্যাংকের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করেছি।  

অভিযান ও টাকা উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে হারুন বলেন, প্রথমে রাজধানীর বনানী থেকে সানোয়ার হোসেন নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার হেফাজত থেকে ১ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে সানোয়ারে তথ্যানুসারে বনানী থেকে ইমনকে গ্রেফতার করা হয়। তার জোয়ার সাহারার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা।

পরে ঢাকার উত্তরা থেকে আকাশ ও সাগর নামে দুইজনকে গ্রেফতারের পর ১ কোটি ৭ লাখ টাকাসহ ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।

ডিবির অপর একটি দল সিলেটের সুনামগঞ্জে অভিযান চালিয়ে বদরুল আলম, মিজানুর রহমান, সনাই ও এনামুল হক বাদশাকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারদের বরাত দিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, গত ৮ মার্চ সিলেট যাওয়ার কথা বলে একটি হায়েস মাইক্রোবাস ভাড়া করে ছিনতাইকারীরা। গাড়ির চালক কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে আসলে পেছনের সিট ঠিক করার কথা বলে পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়, এরপর ওই গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্লান্টের গাড়ি ফলো করতে ওত পেতে থাকে।

ছিনতাইকারী দলটি দীর্ঘদিন ধরে মানি প্লান্টের টাকা বহনকারী গাড়ি অনুসরণ করে আসছিল। তারা জানতো টাকা বহন করার ক্ষেত্রে মানি প্লান্টের কোনো সিকিউরিটি ও অস্ত্র ছিল না।

মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে ছিনতাইকারী দল ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্লান্টের গাড়ি অনুসরণ শুরু করে। এভাবে ছিনতাইকারী দলের ভাড়া করা মাইক্রোবাস তুরাগের নির্জন স্থানে পৌঁছার পর দুই গাড়ির ধাক্কা লাগায়।

এ অজুহাতে গাড়ি থেকে ছিনতাইকারীরা নামে ও তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তারা মানি প্লান্টের গাড়ি থেকে কয়েকজনকে নামিয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলে যায়। এরপর গাড়িতে থাকা ম্যানেজারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে টাকার ট্রাংকসহ নিজেদের মাইক্রোবাস নিয়ে ৩০০ ফিটের নির্জন এলাকার দিকে চলে যায়।

গ্রেফতার আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডে আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ডে এনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

গত ৯ মার্চ সকালে রাজধানীর উত্তরার তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ী ১১ নম্বর সড়কে ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্লান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের গাড়ি থেকে সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনায় অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে ৯ মার্চ রাতে মানি প্ল্যান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসের বাদী হয়ে তুরাগ থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
পিএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।