ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

নাজমা হত্যা: যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কিলার আজাদ আটক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
নাজমা হত্যা: যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কিলার আজাদ আটক

ঢাকা: মাদকের কারবার ও এর অর্থ নিয়ে সৃষ্ট বচসায় রাজধানীর কাফরুল এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় নাজমা বেগমকে। তার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন হৃদয়, মানিক, হিরা, কিলার আজাদ ও আমির নামে কজন সন্ত্রাসী।

এ ঘটনায় মামলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজাদ কাজী ওরফে সন্ত্রাসী আজাদ ওরফে কিলার আজাদকে (৪৫) যাবজ্জীবন সাজা দেন আদালত। কিন্তু আজাদ পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৮ বছর পর শনিবার (১১ মার্চ) বিকালে তাকে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানাধীন এলাকা থেকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৪)।

রোববার (১২ মার্চ) দুপুরে র‌্যাব-৪’র অধিনায়ক (সিও) লেফট্যানেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। জানান, মাদক কারবারির অর্থ নিয়ে বিরোধের জেরে ২০০৫ সালে আজাদ ও তার সহযোগীরা নাজমা বেগমকে তার ঘর থেকে টেনে বের করে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করেছিলেন। পরবর্তীতে তারা পালিয়ে যান। আজাদকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি ওই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

আজাদ র‌্যাবকে জানিয়েছেন, তিনি ও নাজমা বেগম একসঙ্গে রাজধানীর কাফরুল থানার এলাকায় বসবাস করতেন। একসঙ্গে মাদক কারবারও করতেন। আজাদের সুবাদে নাজমার পরিচয় হয় হৃদয়, মানিক, হিরা ও আমিরের সঙ্গে। নাজমা তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন মাদকের কারবার করেছেন। কারবারের অর্থ নিয়ে এক সময় কিলার আজাদ ও মানিকের সঙ্গে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়।

২০০৫ সালের ৮ জুলাই সকালে হৃদয়, মানিক, হিরা, আজাদ ও আমির বিরোধের জের ধরে নাজমাকে তার ঘর থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে আনে। প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে গুলি করে হত্যা করেন তারা। পরবর্তীতে নিহতের মা বাদী হয়ে মানিক, হিরা, কিলার আজাদ, হৃদয়, আমির ও অজ্ঞাতনামা আরও দুই-তিনজনকে আসামি করে কাফরুল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

লেফট্যানেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান জানান, মামলা দায়েরের পর হৃদয় পালিয়ে যান। তাকে ছাড়া বাকি সবাইকে গ্রেফতার করে কাফরুল থানা পুলিশ। পরবর্তীতে আসামিরা ১৫ মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান। এরমধ্যে কিলার আজাদ পালিয়ে যান। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারনামীয় আসামিদের অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন।

এর ভিত্তিতে আদালত বিচারকার্য শুরু করেন। পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে নাজমা হত্যায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকায় কিলার আজাদকে যাবজ্জীবন সাজা দেন ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরও জানান, ১৯৭৮ সালে পাবনা জেলার বেড়া (বর্তমান আমিনপুর) থানাধীন রতনগঞ্জ এলাকায় জন্ম হয় আসামি কিলার আজাদের। তিনি পড়াশোনা করেননি। তার বিরুদ্ধে আগেও দুটি হত্যা ও ৮টি মাদক মামলাসহ মোট ১৮টি মামলার তথ্য পাওয়া যায়। ব্যক্তিজীবনে স্ত্রী ও চার সন্তান রয়েছে তার।

আত্মগোপনে যাওয়ার পর কিলার আজাদ গাজীপুরে অবস্থান নেন। সেখানে তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। নাম পরিবর্তন করে মো. আসিফ হিসেবে তিনি ১৮ বছর অতিবাহিত করেন। তিনি বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে থাকতেন। ২০১৩ সালের শুরুর দিকে পাবনার বেড়া থানা এলাকায় গিয়ে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। পরে হত্যার ঘটনা জানাজানি হলে তিনি যশোরে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি ভেকুর হেলপার হিসাবে কাজ নেন। ২০২০ সালে শুরুর দিকে যশোর থেকে মানিকগঞ্জ জেলার খাশিরচর এলাকায় চলে আসেন আজাদ। স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে থেকে তিনি কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন।

আটক কিলার আজাদকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‌্যাব-৪’র এ অধিনায়ক।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
এসজেএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।