ঢাকা: রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ক্যাফে কুইন স্যানিটারি মার্কেট ভবন বিধ্বস্ত হওয়ায় এর সামনের সড়কের এক পাশ বন্ধ রেখেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এক সপ্তাহ ধরে রাস্তার এক পাশ দিয়েই যানবাহন চলাচল করছে।
সোমবার (১৩ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, সিদ্দিকবাজারের ভবন বিধ্বস্ত হওয়ায় পর থেকে সদরঘাট থেকে গুলিস্তান যাওয়ার প্রধান সড়কে তীব্র যানজট রয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সাত দিন ধরে এই যানজট চলে আসছে। আলুবাজার মোড় থেকে গাড়ির ডাইভারশন করায় যানজট বংশাল, ইংলিশ রোড, নয়াবাজার হয়ে কদমতলী মোড় পর্যন্ত গিয়ে যানজট ঠেকেছে।
অন্যদিকে গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজার, স্টেডিয়াম, জিরো পয়েন্ট, পুরানা পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগর পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে বিরক্ত হচ্ছেন যাত্রীরা। তীব্র যানজটে নিদিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সাধারণ মানুষকে পায়ে হেঁটে চলতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ থেকে গুলিস্তানে আসা মো. রহিম বাংলানিউজকে জানান, সকাল ৯টায় কদমতলী থেকে লেগুনায় উঠি। দুই ঘণ্টায় বংশাল এসেছি। এরপর আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারিনি। এখন পায়ে হেঁটে যাচ্ছি। গাড়ি একচুলও নড়ে না।
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিদ্দিকবাজারে এক সপ্তাহ আগে ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। সে কারণে রাস্তা ডাইভারশন করেছে কর্তৃপক্ষ। এজন্যই এই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থেকে রাজধানীর উত্তরায় বোনের বাসায় যাওয়ার জন্য ৮টার বাসে ওঠেন মো. ইমন। তিনি বলেন, উত্তরায় বোনের বাসায় যাব বলে সকাল ৮টায় পাঁচ লিটার দুধ নিয়ে বাসে উঠেছি। সাড়ে ১২টা বাজে এলাম গুলিস্তানে। বাসায় কখন যাব জানি না। বোনের জন্য দুধ নিয়ে আসছি। সেটা মনে হচ্ছে নষ্ট হয়ে যাবে। এতো যানজট জানলে আসতাম না।
তাঁতীবাজার মোড়ে কথা হয় মো. মিলনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জের আটিবাজার থেকে এসেছি নবাবপুর রোড মেশিনারি মার্কেটে যাব বলে। কিন্তু যানজটের কারণে আসতে অনেক সময় লেগে গেছে। ভেবেছিলাম অনেক কাজ করব। কিন্তু এখন অর্ধেক কাজও করতে পারব না।
ভিক্টর পরিবহনের হেলপার সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, আগে দিনে চার থেকে পাঁচটা ট্রিপ দিতে পারতাম। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনটার বেশি দিতে পারি না। সামনে রমজান, এখন যদি এত যানজট হয়, তখন কেমন হবে! এখন যানজটের কারণ রাস্তার এক পাশ বন্ধ করে রাখার জন্য। বিস্ফোরণে ভবন নড়বড়ে হয়েছে, তাতে রাস্তায় সমস্যা কী, সেটাই বুঝি না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভবনটির বেজমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পিলার ফেটে রড বেরিয়ে গেছে। খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় ভবনটিতে কোনো মেশিন দিয়ে উদ্ধার অভিযান চালানো যাবে না। নড়বড়ে অবস্থায় থাকা পুরো ভবনটি ধসে পড়তে পারে। এ ছাড়া সেখান দিয়ে গাড়ি চলাচল করলে কম্পনেও ভবনটি পড়ে যেতে পারে। তাই ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির দক্ষিণ পাশে অর্থাৎ আলুবাজার সিগন্যাল থেকে যানবাহন ঘুরিয়ে একই রুটে যেতে দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। ফলে গুলিস্তান থেকে সদরঘাটগামী রাস্তা দিয়ে যানবাহন যাচ্ছে, আবার একই রুট দিয়ে ফিরে আসছে। আর এ কারণেই গাড়ির জট।
ডিএমপির ট্রাফিক লালবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বলেন, যানবাহন চলাচলের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ধসে পড়তে পারে, সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিশেষজ্ঞরা এমনটি জানানোর পর আলুবাজার মোড় থেকে গাড়ির ডাইভারশন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ওই রুট দিয়ে সদরঘাট থেকে গুলিস্তানগামী যানবাহন আসতে দিলে উদ্ধার অভিযানেও ব্যাঘাত ঘটত। তাই পুরোপুরি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেখানে যানবাহন এভাবেই চলবে।
গেল মঙ্গলবার ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ক্যাফে কুইন স্যানিটারি মার্কেট ভবন। ওই ভবনের তৃতীয় তলা পর্যন্ত ভেতরের অংশের ছাদ ধসে পড়ে, নিচ তলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত দেয়ালও ধসে পড়ে। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেজমেন্ট। ভবনটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হালকা হেলে গেছে। পাশের ব্র্যাক ব্যাংক ভবনের নিচতলার এক পাশের দেয়াল আর দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত সামনের দেওয়াল ধসে পড়ে। বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
সিদ্দিকবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তদন্তের স্বার্থে অস্থায়ীভাবে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। ওই ভবনের সামনে দিয়ে যাওয়া আসা লোকজন আগ্রহ নিয়ে ভবনটি দেখছেন। চারদিন হয়ে গেলেও ভবন দেখার জন্য উৎসুক জনতার ভিড় কমছে না। ভয়াবহ বিস্ফোরণের সাক্ষী হয়ে রয়েছে ভবনটি। আপাতত ভবনটি স্থিতিশীল রাখতে রাজউক স্টিলের পাইপ বসালেও সেটি ভাঙা হবে নাকি সংস্কার করা হবে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৩
জিসিজি/আরএইচ