ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদপুরে পরীক্ষার ফি ছাড়াই পুলিশে চাকরি পেলেন ৭৩ জন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০১ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৩
ফরিদপুরে পরীক্ষার ফি ছাড়াই পুলিশে চাকরি পেলেন ৭৩ জন

ফরিদপুর: ফরিদপুরে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পেয়েছেন ৭৩ জন। এই চাকরি পেতে প্রতি প্রার্থীকে আবেদন করতে লেগেছিল মাত্র ১২০ টাকা! 

তবে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পাওয়া ৭৩ জনের অনলাইনে আবেদন ফি বাবদ নেওয়া ১২০ টাকা ফেরত দিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান।

শনিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশনায় ও ঢাকা রেঞ্জের তত্ত্বাবধানে শতভাগ স্বচ্ছভাবে আমরা ৭৩ জনকে নিয়োগ দিয়েছি। এরা প্রত্যেকেই নিজ যোগ্যতার চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট সিটিজেন দরকার। তাই আমরা স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্মার্ট ছেলে-মেয়েদের নিয়োগ দিয়েছি। এরা প্রত্যেকেই স্মার্ট পুলিশ হয়ে স্মাট বাংলাদেশ গড়তে ভূমিকা রাখবে বলে আশা রাখি।

এ পুলিশ সুপার আরও বলেন, এ জেলায় চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পাওয়া ৭৩ জন পুলিশ সদস্যদেরই অনলাইনে আবেদন ফি বাবদ নেওয়া ১২০ টাকা আমার ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে ফেরত দিয়েছি। আমি চাই তারা বিনামূল্যে চাকরি পাক। তাদের যোগ্যতার মূল্যায়ন হোক।

এরআগে বুধবার (১৫ মার্চ) রাতে ফরিদপুর পুলিশ লাইন ড্রিল শেডে পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান ট্রেইনি পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন। এতে ৬২ জন পুরুষ এবং ১১ জন নারী প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় জেলা পুলিশ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- ফরিদপুরের পুলিশ সুপার ও ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি মো. শাহজাহান, পিপিএম-সেবা, নিয়োগ বোর্ডের সদস্য গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাখাওয়াত হোসেন, নিয়োগ বোর্ডের অপর সদস্য রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইফতেখারুজ্জামান।

এছাড়াও এসময় ফরিদপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) শেখ মো. আব্দুল্লাহ বিন কালামসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

‘চাকরি নয়, সেবা’ এই স্লোগানে শতভাগ মেধা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে এসব নিয়োগ হয়েছে।  

তাই কোনো প্রকার হয়রানি, সুপারিশ এবং ঘুষ ছাড়া পুলিশের গর্বিত সদস্য হতে পেরে খুশিতে আত্মহারা হতদরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের এসব তরুণ-তরুণীরা।

এমন স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিনামূল্যে চাকরি পেয়ে উচ্ছ্বসিত একজন বলেন, ‘বাবা দিনমুজুরের কাজ করে আমাদের তিন ভাইকে পড়ালেখা শিখিয়েছে। এখন তার বয়স হয়েছে, আগের মত কাজ করতে পারেন না। টিউশনি করিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে নিচ্ছিলাম, কিন্তু পরিবারের হাল ধরার অবস্থা ছিলো না। আজকে আমি সরকারি চাকরি পেয়েছি, আমি মনে করছি আমার নড়বড়ে পরিবারের একটা খুঁটি মজবুত হলো। কখনো ভাবিনি ঘুষ ছাড়াই এমন সোনার হরিণ ধরা দেবে। ’ 

এসময় স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তার যোগ্যতার মূল্যায়ন করার জন্য পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক দরিদ্র বাবার এক মেয়ে। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে সে আজকে থেকে বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য।  

আনন্দে আত্মহারা চাকরি পাওয়া ওই মেয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। আবেগাপ্লুত হয়ে নিয়োগ বোর্ডে থাকা সকল অফিসারকে ধন্যবাদ জানান। এসময় তিনি বলেন, দেশের সেবায় কাজ করতে চাই।

উল্লেখ্য, ফরিদপুর জেলার ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) ৭৩ জনের শূন্য পদের বিপরীতে মোট ২৫০০ জন প্রার্থী অংশ নেন। সেখান থেকে প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং শেষে ১৮০০ জন প্রার্থী শারীরিক মাপ, শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। এখান থেকে বাদ পড়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৭১৬ জন। তাদের মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৬২ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে ৭৩ জনকে মনোনীত করে নিয়োগ বোর্ড।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৩
এসএএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।