ঢাকা: নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তরের অসহযোগিতা ও সমন্বয়হীনতা। ১২টি অধিদপ্তর থেকে আমাদের মনিটরিং করে যায়।
তাই আসন্ন মাহে রমজানে ইফতারি ও সেহরি নির্বিঘ্নে পরিচালনা করার সুযোগের আহ্বান জানাচ্ছি।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি, রমজানের রেস্তোরাঁয় ন্যায্যমূল্যে স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি, বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারণা এবং সরকারি সংস্থার অভিযানের নামে হয়রানি প্রসঙ্গে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান।
তিনি বলেন, কোনো বিশেষজ্ঞ ছাড়াই, লোক ছাড়াই যে যেভাবে পারছে জরিমানার নামে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাদের ব্যবসার সুনাম নষ্ট এবং আর্থিক ক্ষতিসাধন করছে। এভাবে নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আমরা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছিলাম। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নিকট আমরা অনুরোধ করেছিলাম যে, আমাদের সেক্টরের ৯৫ শতাংশ কর্মী অদক্ষ ও স্বল্প শিক্ষিত। তাদের আগে ট্রেনিংয়ে নিয়ে আসেন। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক করে আমাদের একটি মন্ত্রণালয়/ অধিদপ্তর/ সংস্থার অধীনে নিয়ে আসেন, একটি গ্রহণযোগ্য এস. ও. পি প্রদান করেন যার গাইডলাইনে আমরা চলতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা মহানগরের দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র দ্বারা আমাদের পরিচালনার/মনিটরিং করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যেখানে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও আইসিডিডিআর যুক্ত করেছেন। কিন্তু প্রধান স্টেক হোল্ডার হওয়া স্বত্ত্বেও বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতিকে যুক্ত করা হয়নি। এভাবে কোনোদিনই সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তিনি ছাড়া আমাদের এ সমস্যা থেকে কেউ উদ্ধার করতে পারবেন বলে আমাদের মনে হচ্ছে না।
সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে আমরা ভয় পাচ্ছি, প্রতিবারের মত রমজানে আমাদের ওপর বিশাল খড়গ নেমে আসবে। তাই আমরা সরকারের কাছে ৮দফা দাবি জানাচ্ছি।
দাবিগুলো হলো-
১. সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মোবাইল কোর্টে রেঁস্তোরা মালিক সমিতির প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে।
২. করোনা মহামারিতে প্রায় ৩০% রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়েছে। যারা টিকে আছে তারাও ধুকে ধুকে চলছে। এ অবস্থায় ব্যবসায় টিকে থাকতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি সরকারের সহযোগিতা জরুরি।
৩. বাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে রেস্তোরাঁ খাতে। ব্যবসায় টিকে থাকতে খাবারের দাম বৃদ্ধির বিকল্প নেই আমাদের। অন্যদিকে খাবারের দাম বৃদ্ধি করলে ভোক্তারাও রেস্তোরাঁয় খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছেন। সবমিলিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে রেস্তোরাঁ বড় সংকটের দিকে ধাবিত হবে।
৪. রেস্তোরাঁ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা, মিথ্যা তথ্য প্রদান করলে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রচারণা মিথ্যা প্রমাণিত হলে আইসিটি আইনে মামলা করা হবে।
৫. বর্তমানে রেস্তোরাঁ সেক্টরে ভ্যাটের হার হবে সর্বোচ্চ ৩% এবং ট্যাক্সের হার হবে সর্বোচ্চ ০.৫%।
৬. রেস্তোরাঁ সেক্টরে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া রেস্তোরাঁয় গ্যাস লাইন ট্রান্সফার কোনো কারণ ছাড়াই বন্ধ রাখা হয়েছে। অবিলম্বে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে লাইন ট্রান্সফার এবং নাম পরিবর্তনের সব প্রতিবন্ধকতা তুলে নিতে হবে।
৭. প্রতিবছরই মাহে রমজান সমাগত হলে বিভিন্ন মৌসুমি-ফড়িয়া/ব্যবসায়ীরা ইফতারের নামে ইফতারি পসরা সাজিয়ে বসে। এদের হাইজেনিক/নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই, এ বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি।
৮. পবিত্র মাহে রমজানে ইফতারি ও সেহরি সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে পরিচালনা করার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
এসএমএকে/জেডএ