ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পাবনায় ঘর পেয়েছেন ১০ তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী

মুস্তাফিজুর রহমান, ডিষ্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
পাবনায় ঘর পেয়েছেন ১০ তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী

পাবনা: পরিবার ও সমাজ থেকে বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের হিজরা সম্প্রদায়ের অবস্থান। মানুষ হয়েও যারা সমাজের বাঁকা চোখসহ অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন তারা।

এমনি বেশ কিছু তৃতীয় লিঙ্গের (হিজরা সম্প্রদায়ের) মানুষকে মুজিববর্ষের প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে পাবনা সদরে।  

দুটি ধাপের সদর উপজেলাতে মোট ১০ জন গৃহ ও ভূমিহীন তৃতীয় লিঙ্গের হিজরা পরিবার এ ঘর উপহার পেয়েছেন। ঘর পেয়ে মাথা গোজার ঠাঁই মিল্লেও নেই কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। তাই প্রশিক্ষণসহ কর্মসংস্থানের দাবি তাদের।

উপকারভোগী তৃতীয় লিঙ্গ সুমি জেলা শহরের আটঘোরিয়া থানার একদন্ত ইউনিয়নের মো. চাঁদ আলী শেখের সন্তান। শারীরিক অঙ্গভঙ্গি আর পোষাকের কারণে পরিবার ও প্রতিবেশিদের নানা বঞ্চনার শিকার সুমির স্থান হয়েছে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। স্কুলে পড়ার ব্রেঞ্চে তার পাশে কেউ বসতে চায়নি তবু থেমে থাকেনি শিক্ষা অর্জনে।  

২০১৩ সালে পরিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয় সুমি চলে আসে শহরে। ২০১৪ সালে স্থানীয় স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও পরবর্তীতে ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে উত্তির্ণ হন তিনি। ২০১৭ সালে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হয়ে দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পরেছেন এরপর আর লেখাপড়া হয়ে উঠেনি তার। সুমির মত আরও অনেকেই রয়েছে এই প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পাওয়া উপকারভোগী।

হিজরা সম্প্রদায়ের প্রতিটি সদস্য মানুষ হয়েও পরিবার ও সমাজের ভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গির শিকার তারা। তবে সরকারের দেশব্যাপী মুজিববর্ষের মহতী উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রীর উপহার একটি করে ঘর পেয়ে বেশ খুশি তারা। মাথা গোঁজার নিশ্চিত ঠাঁই হওয়াতে একটি চিন্তা দূর হলেও কর্মসংস্থানের অভাবে মানুষের কাছে হাত পাততে হয় তাদের। নানা রংঢং করে অর্থ উপর্জন করতে হয় পথে পথে। তাই সরকারের কাছে মাথাগোজা ঘরের মত কর্মসংস্থানের দাবি তাদের।

তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর মানুষকে একই স্থানে ঘর দেওয়াতে স্থানীয়রা বলেন, সরকার অসহায় দরিদ্রদের পাশপাশি এই হিজরাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করেছেন এটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। ঘরের অভাবে তাদের বিভিন্ন স্থানে থাকতে হতো হয়রানির শিকার হতে হতো। এখন সেটি আর হবে না। আমরা সকলেই বেশ খুশি হয়েছি সরকার প্রধানের এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য।

উপকারভোগী একাধিক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঘর দিয়েছে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে আমরা খুবই খুশি। সারাদিন কাজ কর্মকরে দিন শেষে পাখি যেমন ঘরে ফিরে এখন আমরাও ঘরে ফিরতে পারবো। মানুষের করুণার পাত্র হতে হবেনা। তবে ঘরের পাশাপাশি এখন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে কষ্টো থাকতো না।

উপকারভোগি তৃতীয় লিঙ্গের হিজরা সম্প্রদায়ের সদস্য সুমি বলেন, আগেতো বুঝতে পারিনি শারীরিক সমস্যার বিষয়। এতে আমাদের দোষ কোথায় বলেন। সৃষ্টিকর্তা আমাদের এমন করেই সৃষ্টি করেছেন। তবে কেন আমাদেরকে পরিবার ও সমাজ থেকে দূরে থাকতে হয়। পথে পথে ঘুরে মানুষের চোখ লুকিয়ে কোনো একটি স্থানে থাকতে হেতো। এখন সব কাজ শেষে আপন মনে রাতে ঘুমাতে পারছি। মন খুলে সকলে কথা বলতে পারছি। শত কষ্টো মাঝেও একটু আনন্দ খুজে নেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য যা করেদিয়েছে সেটা আমাদের পরিবারের সদস্য বা মাও করেনি। তাই প্রধানমন্ত্রীই আমাদের বাবা-মা।

পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিদা আক্তার বলেন, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার ছিল দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবেনা। তালিকা করে প্রতিটি অসহায় দরিদ্র বসতহীন মানুষকে একটি করে ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। শুধু ঘরই নয় সেই জায়গাও তাদের নামে লিখে দেওয়া হয়েছে। পাবনা সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে সম্প্রতি চতুর্থ ধাপের বিনামূল্যে প্রধানমন্ত্রীর সেই উপহার ঘর হস্তান্ত করা হয়েছে।  

সমাজের সাধারণ দরিদ্র মানুষের সঙ্গে আমরা চারটি ধাপে ১০জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে ঘর দিতে পেরেছি। ঘর পেয়ে তারা যেমন খুশি আর এই কাজটি সঠিকভাবে করতে পেরে আমরাও বেশ আনন্দ অনুভব করেছি। এই হিজরা বা তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী আমাদের সমাজের অংশ হলেও তারা পরিবার ও সমাজ থেকে বঞ্চিত। তাই তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এখন তাদের বাসস্থানের কিছুটা হলেও সমাধান হয়েছে। এখন দরকার তাদের কর্মসংস্থানের। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে তাদেরকে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার করার।

সম্প্রতি এই মার্চ মাসেই শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে গৃহ ও ভূমিহীনদের মধ্যে বিনামূল্যে ঘর হস্তান্তর করেন। এরই অংশ হিসাবে পাবনাতে ৪র্থ ধাপের ঘর প্রাপ্তির মধ্যে ৬জন তৃতীয় লিঙ্গের হিজরা সম্প্রদায়ের সদস্য রয়েছে। এর আগে তৃথীয় ধাপে পেয়েছেন আরো ৪ জন। এই মিলিয়ে ১০জন পেয়েছেন এই উপহার। তবে ১০ জনকে ঘর দিলেও এখানে প্রায় ২০ জনের বসবাস।  

সুমীর মত পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন নদী, রিপ্তি, মোকলেস, সিদ্দিক, ঐষি, মিষ্টি, মিতুল, মায়সা, শাম্মি, তারা, রজনীরমত অনেক সচ্ছল পরিবারের সন্তান আজ তাদের স্থান হয়েছে পাবনা হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে।  

পাবনা সদরে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে চারটি ধাপে মোট ৬৯৬টি পরিবার ঘর পেয়েছেন। আর সারা বাংলাদেশে ৭টি জেলা ও ১৫৯টি উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন ঘোষণার মধ্যে পাবনা সদর উপজেলাও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।